Thank you for trying Sticky AMP!!

গোমতীকে বাঁচান

কুমিল্লাবাসীর জনজীবনে গোমতী নদীর প্রভাব অসামান্য। ত্রিপুরা থেকে উদ্ভূত নদীটি কটকাবাজার সীমান্ত দিয়ে ঢুকে বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবীদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস ও দাউদকান্দি উপজেলা হয়ে মেঘনায় পড়েছে। কিন্তু এই উপজেলাগুলোর নিরীহ মানুষেরা দুঃখের সঙ্গে দেখছেন, নদী বেদখল হয়ে যাচ্ছে। স্থানে স্থানে নদী মরতে বসেছে। এই হতাশার মধ্যে স্বস্তির বিষয়, বাংলাদেশে ৮৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নদীটির দুই তীরের বিস্তীর্ণ অংশের জমির অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নদী কমিশন গোমতীসহ দেশের সব নদনদীকে বাঁচানো এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় নাগরিক সমাজকে যুক্ত করার একটি মহতী উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু মুশকিল হলো, দেশের বিভিন্ন জেলার অবৈধ দখলদারদের তালিকা হলেও প্রকৃত উচ্ছেদের গতি মন্থর। গোমতী ছাড়াও কুমিল্লায় ডাকাতিয়া ও কাঁকরী নামে আরও দুটি নদী রয়েছে। এসব নদীরও বহু জমি বেহাত হয়ে গেছে। কুমিল্লায় অবৈধ দখলদারদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর দুই মাস চলে গেছে। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযান শুরুই করা হচ্ছে না। এ জন্য তারা যে পরিমাণ তহবিল আশা করেছিল, সেটা তারা পায়নি। কিন্তু এ জন্য বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। সীমিত সম্পদ নিয়েই অবিলম্বে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে হবে।

গোমতীর উভয় তীরে রাস্তা পাকা করা হলে তা পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু রাস্তা পাকা করার মতো অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু করতে হলে নদীর বৈধ সীমানা চিহ্নিত করতে হবে। আইন অনুযায়ী, নদীর দুই পাড়ে স্থায়ী সীমানায় খুঁটি বসানো নদী কমিশনের দায়িত্ব। আমরা আশা করব, নদী কমিশন এই কাজটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যথাশিগগির শেষ করবে।

নদী কমিশনের ২০১৮ সালের ৫ জুনের রিপোর্ট অনুযায়ী, শুকনো মৌসুমে গোমতীর পানি খুব বেশি কমে যায়। তাই তারা একটি সমীক্ষা করার সুপারিশ করেছিল। নদী কমিশন তখন সরেজমিনে দেখেছিল গোমতী যেখানে বাংলাদেশে পড়েছে, সেখানেও নদীর জমিতে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। বালু ও মাটি লুটের দৃশ্যও তাদের নজর এড়ায়নি।

ভূমি ও জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি, সংবাদ ও পরিবেশকর্মীদের উপস্থিতিতে সিএস (ক্যাডেস্টারাল সার্ভে) নকশা এনে নদী কমিশন প্রমাণ করেছে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী স্থানীয় লোকজন নদীর জমি কীভাবে আত্মসাৎ করেছে। এই বিষয়টি কুমিল্লা জেলা নদী রক্ষা কমিটির একটি সভায়ও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছিল। তখনই বলা হয়েছিল, অবৈধ দখল, বালু ও মাটি কাটা সব মিলিয়ে গোমতীর মৃত্যুঘণ্টা বাজতে চলেছে। তাই গোমতী রক্ষায় প্রবল গণ-আন্দোলন দরকার।

নদী কমিশনের রিপোর্টে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদসহ সাত দফা সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু তার অধিকাংশই অবাস্তবায়িত থেকে গেছে। আমরা আসন্ন বাজেটে নদী পুনরুদ্ধারে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দের দাবি জানাই।