Thank you for trying Sticky AMP!!

গ্যাসের দাম বাড়াতে গণশুনানি

সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে বরাবরই জনগণের মতামত উপেক্ষিত থাকে। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে গণশুনানির রেওয়াজ চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকেই; যদিও জনগণ তা থেকে কোনো উপকার পাচ্ছেন, সে কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। ভোক্তাসাধারণের ধারণা, সরকার দাম কত বাড়াবে, তা আগেই ঠিক করে রাখে। গণশুনানি লোক দেখানো মাত্র। তারপরও এর একটি আনুষ্ঠানিক গুরুত্ব আছে। মানুষ অন্তত কমিশনে গিয়ে তাঁদের ওজর-আপত্তির কথা জানাতে পারেন।

এই প্রেক্ষাপটে দেখলে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) আয়োজিত গণশুনানি বিশেষ মনোযোগ দাবি রাখে। সেখানে শুধু গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়েই আলোচনা হয়নি; কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো জ্বালানি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও দুর্নীতির বিষয়টিও উঠে আসে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেন এবং সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতিদিন ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চুরি হয়। সরকার এই চুরি বন্ধ করতে পারলে গ্যাসের দাম না বাড়িয়েও তিতাস লাভবান হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরূল ইমামের অভিযোগ, জ্বালানি–সংকট অনেকটা ইচ্ছাকৃত। স্থল ও সাগরে গ্যাস পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সরকার নতুন কূপ খননের ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা নিচ্ছে না। বরং গ্যাসের সংকট কাটাতে বিদেশ থেকে বেশি দামে এলএনজি আমদানি করছে। এখন নির্দিষ্ট শ্রেণির গ্রাহকেরা যেখানে গড়ে ৩ দশমিক ৪৪ টাকায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনে থাকেন; সেখানে সংস্থাটি আর সব ধরনের তহবিল ও চার্জ ধরে ঘনমিটারপ্রতি ১১ দশমিক ৭৪ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে গ্যাস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামও বেড়ে যাবে এবং এর বিরূপ প্রভাব পড়বে প্রতিটি শিল্পপণ্যে। তবে বাসাবাড়ির গ্রাহকেরা কিছুটা স্বস্তিতে থাকবেন এ কারণে যে এবার রান্নার জন্য ব্যবহৃত আবাসিকের চুলা ও বাণিজ্যিক গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে না। কিন্তু গ্যাসের মোট ব্যবহারের তুলনায় এর পরিমাণ খুবই কম।

তিতাস গ্যাস কোম্পানি লোকসানের দোহাই দিয়ে গ্যাসের দাম বাড়াতে চাইছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুরি-অপচয় বন্ধ করলে লোকসান হবে না। সে ক্ষেত্রে ভোক্তাদের ওপর দাম বাড়ানোর খড়্গ না চাপিয়ে তাদের উচিত চুরি-অপচয় বন্ধ করা। গ্রাহকেরা বাড়তি দাম দেওয়ার আগে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী তিতাসে যে গ্যাস চুরি হচ্ছে, তার প্রতিকারে সংস্থাটি কী ব্যবস্থা নিয়েছে, সেই কৈফিয়ত চাইবে নিশ্চয়ই। আগে তারা চুরিটা বন্ধ করুক। তারপর গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা ভাবা যাবে।
প্রশ্ন উঠেছে রেগুলেটরি কমিশনের একাধিক সদস্যের অতীত ভূমিকা নিয়েও। যাঁরা অতীতে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পক্ষ ওকালতি করেছেন, তাঁরা কীভাবে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করবেন?