Thank you for trying Sticky AMP!!

ঘুষ-বাণিজ্য ও শিক্ষক মারধর

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগ নিয়ে ঘুষ লেনদেন এবং একে কেন্দ্র করে একজন প্রধান শিক্ষককে মারধর করার ঘটনায় আমরা হতবাক।

শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত বছরের শুরুর দিকে গাংনীর ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন ‘দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী’ নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তখন মেহেরপুর-২ আসনের সাংসদ মকবুলের এপিএস সাইফুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ নেন এবং তাঁরা চান যাঁদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া হয়েছে, তাঁদেরই যেন নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক উদ্দিনের সঙ্গে তাঁদের ঝামেলা বাধলে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি আবার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে সাইফুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগের সেই নেতারা আবার চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ নেন। এখন এ নিয়ে ফারুক উদ্দিন যাতে ফের কোনো ঝামেলা না করেন, এ জন্য তাঁকে ভয় দেখাতে তাঁর কার্যালয়ে তাঁর সামনেই উপজেলার বালিয়াঘাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দিন আহমেদকে পেটান সাইফুজ্জামানের অনুসারীরা। তাঁরা ফারুক উদ্দিনকেও গালাগাল করেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, কেউ রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান হলেই কি তাঁর যাকে খুশি তাকে মারার অধিকার আছে? চাইলেই কি তাঁরা যাকে খুশি তাকে যেকোনো চাকরিতে নিয়োগ দিতে পারেন? কারও কি কিছু করার নেই?

আসলে আমাদের দেশে এ রকম ঘটনা নতুন কিছু নয়। এখন আর ঘুষ নিতে কেউ রাখঢাক করেন না। সরকারের প্রশাসনে, দপ্তর-অধিদপ্তরের সর্বত্রই এখন চলছে একচেটিয়া ঘুষের রাজত্ব। সরকারি সব ক্ষেত্রেই নিয়োগ, বদলি, পোস্টিং—প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাখ লাখ টাকা লেনদেন এখন খোলামেলা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যারা এর বিরোধিতা করার চেষ্টা করে, তাদের নানা হেনস্তার শিকার হতে হয়।

গাংনীর কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে, দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরীর প্রতিটি পদের জন্য পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এভাবে ৫৩টি পদের জন্য অন্তত আড়াই কোটি টাকার নিয়োগ-বাণিজ্য হচ্ছে। এভাবে ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ায় যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। চাকরি পাচ্ছেন অযোগ্য প্রার্থীরা।

এ পরিস্থিতির দ্রুত অবসান হওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সরষের ভেতরেই যদি ভূত থাকে তাহলে ভূত তাড়াবে কে? কেননা দেখা যায়, খোদ সাংসদসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘুষ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। কাজেই এ ব্যাপারে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

আমরা চাই গাংনীসহ গোটা দেশে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বাণিজ্যে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।