Thank you for trying Sticky AMP!!

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাত

ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার স্যাটেলাইট ইমেজ অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কেন্দ্রের অগ্রভাগ গতকাল বিকেলে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছে। যে ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রে ৫ মাত্রার ভয়াবহ শক্তিশালী সাইক্লোনের শক্তি অর্জন করেছিল, সেটি যখন আঘাত হানে, তখন ২ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এরপরও আঘাত হানার সময় এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১৬০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার। 

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা টের পেতে সময় লাগবে। তবে বাতাসের যে গতি নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হেনেছে, সেই শক্তির একটি ঘূর্ণিঝড়ের বিধ্বংসী ক্ষমতা যথেষ্ট। ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের একটি অংশ আঘাত হেনেছে সুন্দরবনে। সেই বিবেচনায় এবারও সুন্দরবন বাংলাদেশকে রক্ষায় ভূমিকা পালন করতে পারে।

তবে প্রচুর জলীয় বাষ্প বহনকারী বিশাল আকারের এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সারা দেশেই পড়বে। বিশেষ করে সুন্দরবনসহ খুলনা, বরিশাল বিভাগ এবং সংলগ্ন উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপর প্রভাব পড়বে বেশি। ঘূর্ণিঝড়টির যে গতিপথ নির্দেশ করা আছে, তাতে মূল কেন্দ্রটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হয়ে বাংলাদেশের রাজশাহী অতিক্রম করার কথা। পূর্বাভাস অনুযায়ী সে পর্যন্ত বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারের কাছাকাছি থাকবে। ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি অনুমান করা যাচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আগে প্রস্তুতির জন্য সময় পাওয়া গেছে। কিন্তু বর্তমানে দেশ যে করোনাকালীন জরুরি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে,
তাতে এই আঘাত মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রতিবারের মতো লোকজনকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কাজটি এবার ততটা সহজ ছিল না। করোনা সংক্রমণের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়েছে এবং সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি বিবেচনা করতে হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী জানিয়েছেন, মোট প্রায় ২৪ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক হলে এবং বাড়িঘর বিধ্বস্ত হলে লোকজনকে দীর্ঘ সময় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হবে। তখন করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং আশ্রয় গ্রহণকারীদের খাবারদাবার ও প্রয়োজনীয় সাহায্য নিশ্চিত করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা আশা করব, প্রশাসনের তরফ থেকে সব প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

ঘূর্ণিঝড়টি যে সময়ে আঘাত হেনেছে, সেটাও একটা বাড়তি বিপদের ঝুঁকি তৈরি করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল দুপুর থেকেই উপকূলবর্তী জেলাগুলোর নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বাড়ার খবর পাওয়া গেছে। এখন একদিকে অমাবস্যা এবং অন্যদিকে সন্ধ্যায় যখন ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ অতিক্রম করছিল, তখন জোয়ারের সময় হওয়ায় উঁচু জলোচ্ছ্বাসের জোরালো আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উপকূলীয় জেলাগুলোর নাজুক বাঁধগুলো। 

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন বলছে, উপকূলীয় চার জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও বরগুনার ৩৯১ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে দীর্ঘদিনেও এই বাঁধগুলোর সংস্কার হয়নি। অনেক স্থানে স্থায়ী বাঁধ তৈরি হয়নি। ৫–৬ ফুটের জলোচ্ছ্বাসেই যে বাঁধগুলো রক্ষা করা কঠিন, সেখানে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার খবর এসেছে।

এটা পরিষ্কার যে ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়ার পর বড় ধরনের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করতে হবে। উপকূলের বহু মানুষ নিজেদের বাড়িঘরে রয়ে গেছেন। ফলে বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থাসহ বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের মতো অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এগুলো দ্রুত স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিতে হবে। আজ ঘূর্ণিঝড় কেটে যাওয়ার পরপরই কাজে নেমে যেতে হবে।