Thank you for trying Sticky AMP!!

চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাং

শিশু-কিশোরদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে। বিশেষ করে যেসব শিশু-কিশোরকে আমরা সুন্দর শৈশব ও কৈশোর দিতে পারিনি, যারা মা–বাবার স্নেহ-ভালোবাসা এমনকি জীবনযাপনের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, তারা সহজেই নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় পেশাদার অপরাধীরা নিজেদের স্বার্থে শিশু–কিশোরদের ব্যবহার করে থাকে। পরবর্তীকালে এদের অনেকের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব হয় না। 

সম্প্রতি চট্টগ্রামে উড়ালসড়কে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে যেসব শিশু-কিশোর ধরা পড়েছে, তাদের প্রায় সবারই জীবন ভাগ্যবিড়ম্বিত। সুস্থ ও স্বাভাবিক শৈশব বলতে যা বোঝায়, তা তারা পায়নি। এদের বেশির ভাগ বাস করছিল রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল বা ফুটপাতে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মূলত কিশোর গ্যাংই চট্টগ্রামের উড়ালসড়কে ছিনতাই করে থাকে।

গত ২৮ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত র‌্যাব-পুলিশ নগরে অভিযান চালিয়ে ৪৪ জনকে আটক করে। তাদের কাছে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ছুরি, রড ও সুতা পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, নেশার টাকা জোগাড় করতে তারা ছিনতাই করে থাকে। আটক শিশু–কিশোরদের কিশোর সংশোধন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

ছিনতাই ও মাদক সেবন—দুটোই গুরুতর অপরাধ। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত শিশু-কিশোরদের অপরাধী হিসেবে দেখা যাবে না। কোনটি অপরাধ আর কোনটি অপরাধ নয়, তা বোঝার বয়স তাদের হয়নি। সে ক্ষেত্রে সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত সঠিক। কিন্তু সমস্যা হলো, দেশে শিশু-কিশোর সংশোধন কেন্দ্র নামে যে কটি প্রতিষ্ঠান আছে, কোনোটিই মানসম্মত নয়। প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবলও সেখানে নেই। যঁারা এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন, তঁারা অনেক সময় শিশু–কিশোরের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করে থাকেন। ফলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এই অবস্থার দ্রুত অবসান হওয়া জরুরি। 

প্রতিটি কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে উপযুক্ত বৃত্তিমূলক কাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে এখান থেকে বেরিয়ে কাউকে অনিশ্চিত পথে পা বাড়াতে না হয়। প্রত্যেক শিশু-কিশোরের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। কারও উপযুক্ত অভিভাবক না থাকলে রাষ্ট্রকে তার অভিভাবকের দায়িত্ব নিতে হবে। সব গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র তা করে থাকে। উন্নয়নের মহাসড়কে ওঠা বাংলাদেশ কেন সেই দায়িত্বটুকু পালন করবে না?

রাষ্ট্রকে মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক শিশুর সুন্দর শৈশব ও কিশোরের সুন্দর কৈশোরই তাকে অপরাধ থেকে মুক্ত করতে পারে।