Thank you for trying Sticky AMP!!

চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস

সম্পাদকীয়

করোনার কারণে দীর্ঘদিন চাকরিতে নিয়োগ বন্ধ থাকার পর যখন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করেছে, তখন জালিয়াত চক্রের প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্বেগজনক খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় এ জালিয়াতি ধরা পড়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক পরীক্ষা বাতিল করে দিয়েছে। আরও একাধিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের এসব মৃদু পদক্ষেপ লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমাতে পারবে কি?

প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, গত শনিবার বেলা তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত ১ হাজার ৫১১টি পদের বিপরীতে অনুষ্ঠিত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১০০টি প্রশ্নের প্রিন্ট করা উত্তরপত্র ফেসবুকে পাওয়া যায়। আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এ পরীক্ষা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল। এ পর্যন্ত যেসব তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে স্পষ্ট যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীরাই জালিয়াতির পথঘাট দেখিয়ে দিয়েছেন। ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন জালিয়াতির অভিযোগে পাঁচ ব্যাংক কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের হেফাজত থেকে একটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন মডেলের পাঁচটি মুঠোফোন, চারটি প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র চারটি, হোয়াটসঅ্যাপে রক্ষিত উত্তরপত্রের ছবি, একটি প্রবেশপত্রের ফটোকপি ও নগদ ছয় লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

ডিএমপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডিবির তেজগাঁও অঞ্চলের একজন সদস্য ছদ্মবেশে পরীক্ষার্থী সেজে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম হোতা রাইসুল ইসলাম ওরফে স্বপনকে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করলে পরীক্ষার্থীকে বুথে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পরীক্ষার উত্তরপত্রসহ রাইসুলকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। রাইসুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের মূল হোতা মো. মুক্তারুজ্জামান রয়েলসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধরা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, রূপনগর, মিরপুর, মাতুয়াইল, শেওড়াপাড়া, শেরেবাংলা নগর ও পল্লবী এলাকায় বুথ (যেখানে পরীক্ষার পাঁচ–ছয় ঘণ্টা আগে নিজস্ব লোকের মাধ্যমে) বসিয়ে পরীক্ষার্থীদের ফাঁস করা প্রশ্ন ও উত্তরপত্র মুখস্থ করানো হয়।

ডিবির অনুসন্ধানী দল যেভাবে হাতেনাতে জালিয়াত চক্রকে ধরেছে, সে জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাতে হয়। একই সঙ্গে প্রশ্ন ওঠে, নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ১০ থেকে ২০টি পরীক্ষা হয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষায়ও যে অনুরূপ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেনি, তার নিশ্চয়তা কী? অতএব, সব নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কে সুলুকসন্ধান করা প্রয়োজন। তরুণদের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে যাঁরা জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে এবং মেধাবীদের বঞ্চিত করছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

জালিয়াতির অভিযোগ থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক গত শনিবার অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করেছে। এতে তাঁদের চেষ্টা নস্যাৎ হবে, যাঁরা অসাধু উপায়ে পরীক্ষায় পাস করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লক্ষাধিক পরীক্ষার্থীর যে ভোগান্তি হলো, তার প্রতিকার কী। কর্তৃপক্ষের উচিত হবে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে আগের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো ফি না নেওয়া। এর আগে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরাধীরা শাস্তি পেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে। এবার যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়। সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।