Thank you for trying Sticky AMP!!

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ

মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার চলে তার নিজস্ব নিয়মে ও স্বতঃস্ফূর্ত গতিতে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি প্রত্যাশা করা হয় না। তবে বাজারের গতিবিধির ওপর সরকার নজর রাখবে, কোনো ধরনের কারসাজির মাধ্যমে পণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির তৎপরতার অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখবে এবং প্রতিকারের পদক্ষেপ নেবে—এসব স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কিন্তু জনসাধারণের এ প্রত্যাশা সব সময় পূরণ করা হয় না।

বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চাল; বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষকে প্রচুর পরিমাণে ভাত খেতে হয় শুধু শর্করার চাহিদা পূরণের জন্য নয়, তাদের আমিষেরও একটা বড় অংশ আসে ভাত থেকে। তাই চালের দাম যেন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্রয়সাধ্যের সীমা অতিক্রম না করে, সরকারকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়। সরকারের পক্ষে খোলাবাজারে চালের দাম বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয়; দেশি ও আন্তর্জাতিক বাজারের গতি-প্রকৃতি অনুযায়ী চালের দাম ওঠা–নামা করা স্বাভাবিক। কিন্তু যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই চালের দাম হঠাৎ হঠাৎ বেড়ে যায়।

এর সর্বশেষ দৃষ্টান্ত লক্ষ করা গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও অব্যবহিত পরে। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরোল, দেশের বাজারে আকস্মিকভাবে চালের দাম প্রতি কেজিতে তিন-চার টাকা বেড়ে গেছে। কিন্তু চালের এই মূল্যবৃদ্ধির কোনো যুক্তিসংগত কারণ খোদ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন (বিটিসি) খুঁজে পায়নি। বিটিসির পক্ষ থেকে বলা হলো, বাংলাদেশের বাজারে চালের যে মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে, তার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। বিটিসির দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেল এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) দেশে আগের বছরের তুলনায় ২৪ লাখ ৭৪ হাজার টন বেশি চাল উৎপন্ন হয়েছে। একই বছরে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে ৪২ লাখ টনের বেশি চাল। অন্যদিকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম প্রতি টনে প্রায় ৪০ মার্কিন ডলার কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমেছে, কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বেড়েছে—এ অস্বাভাবিকতার ব্যাখ্যা কী হতে পারে?

গত শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নতুন সরকার গঠিত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই হঠাৎ চালের দাম বেড়ে গেল। তখন আমি খাদ্যমন্ত্রীসহ চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করলাম। জানতে পারলাম, দেশের মাত্র চার-পাঁচজন বড় ব্যবসায়ী চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। ফলে তাঁদের মধ্যে একটা যোগসাজশ তৈরি হয়। ব্যবসায়ীদের মধ্যে এ ধরনের যোগসাজশ থাকলেই সাধারণ জনগণ ক্ষতির মুখে পড়ে।’

প্রকৃতপক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রীর কথায় নতুন রহস্য উন্মোচিত হয়নি। কতিপয় বড় ব্যবসায়ী নিজেদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী দেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন—এই অভিযোগ পুরোনো। গত ২৫ জানুয়ারি প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চাল ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলেন, কয়েকটি বড় চালকলের মালিকেরা একজোট হয়ে চালের বাজার ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করেন। সর্বশেষ চালের মূল্যবৃদ্ধিও যে তাঁদের কারসাজিরই ফল ছিল।

বাণিজ্যমন্ত্রী যখন অবগত হয়েছেন যে ‘দেশের চার-পাঁচজন বড় ব্যবসায়ী চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন’, তখন তাঁর মন্ত্রণালয়সহ সরকারের কাছে স্বাভাবিক প্রশ্ন হলো, ওই ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক ও অনৈতিক মুনাফালিপ্সা চরিতার্থ করার তৎপরতা দমনে কী উদ্যোগ নেওয়া হবে? শনিবারের সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বক্তব্যে এ রকম কোনো ইঙ্গিত ছিল না—কোনো খাতের ব্যবসায়ীরা যেন যোগসাজশ করতে না পারেন, সে জন্য তিনি বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা মনে করি সেটা যথেষ্ট নয়, চালের বাজারে কতিপয় বড় ব্যবসায়ীর অনৈতিক যোগসাজশের সুযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।