Thank you for trying Sticky AMP!!

চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষা

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এক জটিল জাতীয় সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। জটিলতা বিভিন্নমুখী। প্রথমত, ইতিমধ্যে সংক্রমিত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের বিচ্ছিন্ন করা। এই দুটি ক্ষেত্রে ব্যাপক সীমাবদ্ধতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এসব নিয়ে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা চলছে; যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না বা কম হচ্ছে, তা হলো দেশের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষা।

চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা বলতে আমরা বুঝি চিকিৎসক, নার্স, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ পুরো হাসপাতালের সুরক্ষা। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, করোনাকবলিত দেশগুলোতে অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন; বিশেষত চীন, ইরান ও ইতালি থেকে কিছু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যুর খবরও এসেছে। ইতালিতে ১৮ মার্চ পর্যন্ত ৫ জন চিকিৎসক ও ১৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেছেন; আক্রান্ত হয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী।

আমাদের দেশে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি অনেক বেশি। কারণ, করোনাভাইরাস অতিমাত্রায় সংক্রামক। এমনিতে হাসপাতালগুলোতে সব সময় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা চলে। ইনডোর-আউটডোর মিলিয়ে বিপুল লোকসমাগম ঘটে। শয্যার অভাবে প্রচুর রোগীকে মেঝেতে ও বারান্দায় আশ্রয় নিতে হয়। তাদের সঙ্গে থাকেন পরিচর্যাকারী আত্মীয়স্বজন। এই পরিবেশে হাসপাতালের বাইরে থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি এবং সেই ঝুঁকি থেকে চিকিৎসক, নার্স, পরিচ্ছন্নতাকর্মী—কেউ মুক্ত নন। কারণ, তাঁদের কারও যথাযথ সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি।

মনে রাখা প্রয়োজন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের সমান্তরালেই অজস্র মানুষ প্রতিদিন নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং চিকিৎসা নিতে হাসপাতালগুলোতে যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা তাদের চিকিৎসা দিচ্ছেন, নার্সরা পরিচর্যা করছেন। সাধারণ সর্দি-কাশি ও করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলো যেহেতু একই রকমের, তাই রোগীদের মধ্যে করোনা-আক্রান্ত কেউ আছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না। আর যেহেতু করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত অত্যন্ত সীমিত, সেহেতু সব হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সব ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করেই দৈনন্দিন চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা অত্যন্ত কম, নার্স আরও কম। এই পরিস্থিতিতে একজন চিকিৎসকের অসুস্থ হয়ে পড়ার অর্থ অনেক রোগীর চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ হারানো। করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার খুব কম হওয়া সত্ত্বেও এর সংক্রমণ থেকে চিকিৎসকদের সুরক্ষা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে তাঁদের সুস্থতার ওপর অনেক রোগীর চিকিৎসা নির্ভর করে। আর এই সংকটময় পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের শুধু করোনায় আক্রান্ত রোগীদের নয়, অন্য রোগীদেরও চিকিৎসা দেওয়া অব্যাহত রাখতে হবে। মোদ্দা কথা, চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার ওপর গোটা চিকিৎসাব্যবস্থার কার্যকারিতা অনেকাংশেই নির্ভর করছে।

কিন্তু বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় রয়েছে, এমন কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরছেন। সরকারের পক্ষ থেকে যখন বারবার বলা হচ্ছিল যে যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তখন কেন চিকিৎসক-নার্সদের জন্য পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্টের (পিপিই) ব্যবস্থা করা হয়নি? যদিও অনেক দেরি হয়ে গেছে, তবু এখনই এদিকে জরুরি দৃষ্টি দিতে হবে। শুধু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্সদের জন্য নয়, সব হাসপাতালের সব চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য পর্যাপ্ত পিপিইর ব্যবস্থা করাসহ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার উদ্যোগ এখনই নেওয়া প্রয়োজন।