Thank you for trying Sticky AMP!!

জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থাপনা

সম্পাদকীয়

প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) একই সঙ্গে ভোটার পরিচয়পত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়; কিন্তু এর ব্যবহার শুধু ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি আসলে এক অপরিহার্য দলিল, যা ছাড়া মোবাইল কার্ডের সিম কার্ড কেনা ও ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে জমি কেনাবেচা পর্যন্ত কোনো কাজই করা এখন আর সম্ভব নয়। আর এ মুহূর্তে দেশজুড়ে যে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি চলছে, সেখানে টিকা গ্রহণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র বা তার কপি দেখানো বাধ্যতামূলক। জাতীয় পরিচয়পত্রের কারণে সরকারি নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজও আগের তুলনায় সহজ হয়ে এসেছে। করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি যে সুচারুভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তাতে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভূমিকা ব্যাপক।

কিন্তু এ অপরিহার্য দলিলটির সুরক্ষায় যে সমস্যা রয়ে গেছে, তার একটি দৃষ্টান্ত পাওয়া গেল গত রোববারের প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের বর্ণনা থেকে। লক্ষ্মীকান্ত রায় নামে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কাকেয়া টেপা গ্রামের বাসিন্দা এক স্কুলশিক্ষক তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণের জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করতে গিয়ে জানতে পেলেন, বাংলাদেশের নাগরিকদের তালিকা তথা ভোটার তালিকায় তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রধারী কোনো ব্যক্তি নেই। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নথি ঘেঁটে তাঁকে জানালেন, লক্ষ্মীকান্ত রায় নামের জাতীয় পরিচয়পত্রধারী ব্যক্তিটি কয়েক বছর আগে মারা গেছেন।

অনুসন্ধানের পর আবিষ্কৃত হলো, শত্রুতাবশত এক ব্যক্তি নির্বাচন অফিসে গিয়ে বলেছিলেন যে লক্ষ্মীকান্ত রায় মারা গেছেন, তাঁকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হোক। দেখা যাচ্ছে, এ বাদ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াটি এমন যে এ ধরনের মিথ্যাচারের মাধ্যমে লক্ষ্মীকান্ত রায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রটিকে অকার্যকর করে ফেলা সম্ভব হয়েছে। ‘নামকর্তনের’ এই প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য-সাবুদ, সত্যায়ন-প্রামাণ্যকরণের বিষয়গুলোর অনুশীলন এমনই শিথিল যে লক্ষ্মীকান্ত রায়ের মতো অনেকেই এভাবে মৃতের তালিকাভুক্ত হয়ে ভোটার তালিকা তথা বাংলাদেশের নাগরিকদের জাতীয় তালিকা থেকে বাদ পড়ে যেতে পারেন। লক্ষ্মীকান্ত রায়ের এ ঘটনার সুবাদেই জানা গেল, শুধু লালমনিরহাট সদর উপজেলাতেই আটজন জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

এ থেকে অনুমান করা যায়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও একই প্রক্রিয়ায় অনেক মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। কারণ, এভাবে নাগরিকদের জাতীয় তালিকার সঠিকতা লোপ পাবে, বাদ পড়া নাগরিকেরা ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হবেন, অন্যান্য সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়বেন। সুতরাং ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তনের প্রক্রিয়ায় অসদুপায় অবলম্বনের যে সুযোগ আছে বলে এ ঘটনায় দেখা গেল, তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। লালমনিরহাটের এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি হয়েছে। আমরা আশা করছি এর মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীকান্ত রায়ের বিষয়টির একটি সুরাহা ঘটবে এবং একই সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে ‘নাম কর্তন’সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার ফাঁকফোকর বের করা সম্ভব হবে।

অন্যদিকে ভোটার হওয়ার বয়সে পৌঁছালে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া, কারও জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে নতুন করে তা ইস্যু করানো এবং পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনের প্রক্রিয়াটিতে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা ঘটছে। প্রথম আলোর অপর একটি প্রতিবেদনের খবর অনুযায়ী, এনআইডি সংশোধনের দেড় লাখ আবেদন ঝুলে রয়েছে। সংশোধনের আবেদনের পাঁচ বছর পরও সংশোধিত কার্ড না পাওয়ার নজির রয়েছে। এ সমস্যার একটি বিহিত জরুরি। অর্থাৎ জাতীয় পরিচয়পত্রসংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষ এবং নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের শতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিত করার সব ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে। প্রয়োজনে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।