Thank you for trying Sticky AMP!!

জাপানে শ্রমশক্তি রপ্তানি

নানা কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে যখন প্রবাসী শ্রমিকেরা দেশে ফিরে আসছেন, তখন পুবের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জাপানে শ্রমশক্তির নতুন বাজার খুলে যাওয়া খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। গত মঙ্গলবার জাপানের রাজধানী টোকিওতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে এ–সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি সই করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান ও জাপানের বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ইমিগ্রেশন সার্ভিস এজেন্সির কমিশনার সোকো সাসাকি। 

এই চুক্তির ফলে জাপানের ১৪টি খাতে বিশেষায়িত দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ তৈরি হলো। তবে ২০১৭ সাল থেকে কারিগরি শিক্ষানবিশ হিসেবে কিছু কর্মী যাচ্ছেন জাপানে। ওই বছর ইন্টারন্যাশনাল ম্যানপাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন জাপানের সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল; এর আওতায় সরকারিভাবে কারিগরি শিক্ষানবিশ হিসেবে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। নতুন চুক্তি অনুযায়ী জাপানে আগামী পাঁচ বছরে শিল্পকারখানা, নির্মাণকাজ, কৃষি, অটোমোবাইল, সেবাদানকারীসহ ১৪টি খাতে দক্ষ জনশক্তি পাঠানো যাবে। 

উল্লেখ্য, আগে থেকেই আটটি দেশ যথাক্রমে চীন, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, মঙ্গোলিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম দেশটিতে জনশক্তি পাঠাচ্ছে। সে হিসাবে দেশটিতে বাংলাদেশ নবম জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, জাপান দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিক নেবে। তাই মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়ায় যে জনশক্তি রপ্তানি হয়, জাপান তার থেকে ভিন্ন হবে। অন্য দেশের তুলনায় জাপানে আয়ের সুযোগও বেশি। আগামী পাঁচ বছরে সাড়ে তিন লাখ বিদেশি কর্মী নেবে দেশটি। স্বাভাবিকভাবে যে দেশ বেশিসংখ্যক প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তির জোগান দিতে পারবে, সে দেশ থেকে বেশিসংখ্যক শ্রমিক তারা নেবে। জাপানের মানুষের গড় আয়ু ৮৪ বছর এবং ১০০ বছর বা তার অধিক বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। বয়স্ক এসব মানুষের সেবার জন্যও দক্ষ জনবল দরকার। নির্মাণশিল্প, প্রযুক্তি, নার্সিং, কৃষি, হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম খাতেও কাজের সুযোগ আছে। সুতরাং জাপানে জনশক্তির নতুন বাজার খুলেছে—এই খবরে আমাদের সে দেশে পাঠানোর উপযোগী দক্ষ জনবল তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তাদের যে ধরনের বিশেষায়িত ও দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন, সে রকম শ্রমিক পরিকল্পিতভাবে তৈরি করতে হবে। আর এটাও বাস্তব যে অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ ভবিষ্যতে আরও কমে যাবে।

জাপানে জনশক্তি রপ্তানির জন্য বিশেষভাবে জোর দিতে হবে জাপানি ভাষা শিক্ষার ওপর। গত বছর মাত্র ১৬৩ জনকে জাপানে পাঠাতে পেরেছে বাংলাদেশ। চলতি বছর ৪০০ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জুলাই পর্যন্ত গেছেন ১১৯ জন। আরও প্রায় এক হাজার কর্মীর ভাষা প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলার ২৭টি কেন্দ্রে ৪০ জন করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বিএমইটি। চার মাস মেয়াদি জাপানি ভাষা শেখার এসব প্রশিক্ষণের পর পরীক্ষায় বসেন কর্মীরা। উত্তীর্ণ হলে আইএম জাপানের ব্যবস্থাপনায় আরও চার মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষানবিশ হিসেবে তাঁদের জাপানে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রশিক্ষণের আওতা বাড়াতে গত ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তাদের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। 

চুক্তি অনুযায়ী যাঁরা জাপানে চাকরি পাবেন, তাঁরা বিনা খরচে সেখানে যেতে পারবেন। কোনো অসাধু জনশক্তি রপ্তানিকারকের দ্বারা যাতে কেউ প্রতারিত না হন, সে বিষয়ে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে মালয়েশিয়া একাধিকবার বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি স্থগিত করেছে। জনশক্তি রপ্তানির নতুন বাজার জাপানের ক্ষেত্রে যেন এ রকম না হয়।