Thank you for trying Sticky AMP!!

জেএসসি ও পিইসি পরীক্ষা

করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে, তা কবে কাটবে, কবে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যেতে পারবে, কেউ জানেন না। বিকল্প হিসেবে সরকার বিটিভি ও অনলাইনের মাধ্যমে যে পাঠদান চালু করেছে, বিরাটসংখ্যক শিক্ষার্থী সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এরই মধ্যে শিক্ষাবর্ষের সাত মাস চলে যাওয়ায় বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষার বিষয়টি সামনে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি),ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাতিল করার চিন্তাভাবনা করছে।

যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য অনুকূল পরিবেশ ও প্রস্তুতি থাকা দরকার। এখানে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয় যেমন আছে, তেমনি আছে অভিভাবক, শিক্ষক ও পরীক্ষার কাজে সহায়তাকারী কর্মচারীদেরও। ফলে সার্বিক বিবেচনায় এসব পরীক্ষা বাতিল করাই হবে যুক্তিযুক্ত। একই সঙ্গে পরিস্থিতি খুব দ্রুত স্বাভাবিক না হলে বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই হয়তো শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮৪টি দেশ এ বছর স্কুল পর্যায়ে পাবলিক পরীক্ষা বাতিল বা স্থগিত করেছে।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে স্কুল পর্যায়ে অষ্টম ও পঞ্চম শ্রেণিতে এবারের পাবলিক পরীক্ষা না নেওয়ার যে চিন্তাভাবনা চলছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন তোলা যায়, পরীক্ষাগুলোর আদৌ প্রয়োজন আছে কি না। ২০১১ সাল থেকে হঠাৎ করেই এই দুটি পাবলিক পরীক্ষা চালু করা হয়। অথচ ২০১০ সালের বহুল আলোচিত জাতীয় শিক্ষানীতিতে এ রকম কোনো সুপারিশ ছিল না। ২০১১ সালে যখন জেএসসি পরীক্ষা চালু হয়, তখন যুক্তি দেখানো হয়েছিল, সরকারি চাকরিতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে নিয়োগে ন্যূনতম যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। কিন্তু অনেক প্রার্থী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত না পড়েই স্কুল থেকে সনদ নিয়ে চাকরির জন্য আবেদন করে থাকেন। কিন্তু ২০১৬ সালে এই পদে ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয় দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা।

 প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা পিইসি পরীক্ষা সম্পর্কে অামরা বরাবরই আপত্তি জানিয়ে এসেছি। শিশুশিক্ষার্থীদের ওপর কোনো ধরনের পরীক্ষা চাপিয়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা ছিল না এবং এখনো নেই। কোনো শিক্ষা বিশেষজ্ঞের তরফে এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আসেনি। জেএসসি বা পিইসি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার কোনো উন্নতি হয়নি। এই দুটি পাবলিক পরীক্ষা শিশুশিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে ঝুঁকে পড়তে বাধ্য করেছে। প্রসারিত হয়েছে নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসা। সবকিছু মিলিয়ে অভিভাবকদের শিক্ষাব্যয় ও ভোগান্তি বেড়েছে। অথচ এই সনদ দুটি কোনো কাজে আসছে না।

সার্বিক বিবেচনায় আমরা মনে করি, শুধু এই বছর নয়, সব সময়ের জন্যই স্কুল পর্যায়ের এই দুটি পাবলিক পরীক্ষা বাদ দেওয়া উচিত। আমরা আশা করছি বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।