Thank you for trying Sticky AMP!!

ঝড়ের রাতে পাখি হত্যা

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের তিনটি শিমুলগাছে বাসা বেঁধেছিল প্রায় ২০০ শামুকখোল পাখি। কিছু নিষ্ঠুর লোক ২১ মে রাতে ঝড়ের সময় তাদের যেভাবে ধরে নিয়ে জবাই করে খেয়ে ফেলেছে, তা বড়ই বেদনাদায়ক। শামুকখোল বাংলাদেশে প্রায়–বিলুপ্ত প্রজাতির পাখি। ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রোটেকটেড বার্ড বা সুরক্ষিত এসব পাখি শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ—এক বছর কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার কথা বলা হয়েছে।

বাজিতপুর গ্রামে শামুকখোল পাখির আশ্রয় নেওয়ার কারণ হলো এর পাশেই চলনবিল। এই পাখি সাধারণত জলাশয়ের পাশে বড় কোনো গাছে বাসা বাঁধে। দিনের বেলা তারা জলাশয়ে যায় খাবারের খোঁজে। রাতে বাসায় ফিরে আসে। এদের প্রধান খাদ্য ফসলের খেতে বিচরণকারী ছোট ছোট শামুক, যেগুলো ধানখেতে সদ্য গজানো ধানের শিষ খেয়ে ফেলে। এই পাখি সেসব শামুক খেয়ে কৃষকদের ফসল বাঁচায়। কিন্তু এদের সুরক্ষা প্রয়োজন শুধু এ কারণেই নয়, বিপন্নপ্রায় পাখি হিসেবে এদের রক্ষা করা প্রয়োজন জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে।

এই শামুকখোল পাখিরা অন্য কোনো এলাকা থেকে এসে বাজিতপুর গ্রামের তিনটি শিমুলগাছে আশ্রয় নিয়েছিল সম্ভবত এ জন্য যে জায়গাটি তাদের কাছে নিরাপদ মনে হয়েছিল। কিন্তু গ্রামটির কিছু মানুষ পাখিগুলো শিকার করার চেষ্টা করেছিল; কিছু তরুণ পাখিপ্রেমিক বাধা দেওয়ায় তারা এত দিন তা করতে পারেনি। অবশেষে ঝড়ের সুযোগ নিয়েছে। কিন্তু আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ করেছে; এ জন্য তাদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

বিস্ময়ের কথা, বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেছেন, বাজিতপুর গ্রামে যে ওই পাখিগুলো ছিল, তা তাঁর জানা ছিল না। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে এমন প্রজাতির পাখি তাঁর উপজেলাতেই আছে এবং কিছু মানুষ সেগুলো শিকার করার চেষ্টা করছে—এসব খবর তিনি যদি না রাখেন, তাহলে সরকারের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর দায়িত্বটা কী?

প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ জীববৈচিত্র্য রক্ষা। এ জন্য শুধু আইন থাকলেই চলবে না, আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। যেসব ব্যক্তি ২০০ শামুকখোল পাখি জবাই করেছে, তাদের আইনানুগভাবে শাস্তি দিতে হবে, যাতে আর কেউ এমন অপরাধ না করে। সেই সঙ্গে জীববৈচিত্র্য রক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর নিয়মিত উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন।