Thank you for trying Sticky AMP!!

ডায়াবেটিক শিশুদের কষ্ট

অবহেলা একধরনের অপরাধ। সমাজের সর্বস্তরে নানা ক্ষেত্রেই এই অপরাধের প্রবণতা দৃশ্যমান। কিন্তু চিকিৎসা খাতেও যদি তা প্রকট হয়ে ওঠে, তবে এর ফলটি ভয়াবহ। দেশে ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগের বিস্তার ঘটছে আশঙ্কাজনকভাবে। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশনের হিসাব বলছে, বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। এর মধ্যে ১৭ হাজারের বেশি শিশু জুভেনাইল বা টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ইনসুলিন ছাড়া এসব শিশু বাঁচে না। মর্মান্তিক কথা হলো এসব শিশুর বেশির ভাগই ইনসুলিন পাচ্ছে না। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় অনেক বাবা-মা তাঁদের শিশুসন্তানদের ইনসুলিন দিতে পারছেন না।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক শিশুর হতদরিদ্র বাবা-মা জানেনই না তাঁদের সন্তান টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এমনিতেই শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। অভিভাবকদের মধ্যে তো বটেই, চিকিৎসকদের মধ্যেও এ নিয়ে সচেতনতা কম। বাচ্চারা প্রাথমিক উপসর্গ নিয়ে গেলেও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, চিকিৎসকেরা বাচ্চাদের ডায়াবেটিস বাদে বাকি পরীক্ষা করিয়েছেন। কারণ ওই বয়সে যে ডায়াবেটিস হতে পারে, সেটাই তাঁদের মাথায় থাকে না। যেসব শিশুর ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তাদের সবার ইনসুলিন নেওয়ার সুযোগ থাকে না। যাদের ইনসুলিনের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাদের একটি অংশ আবার তা নানা কারণে সময়মতো নিতে পারে না। অথচ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বড়দের চেয়ে শিশুদের কষ্ট বেশি। এই কষ্ট নিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে জীবন দেখার অনেক আগেই তাদের জীবন থেকে বিদায় নিতে হয়।

গত বুধবার বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে আয়োজিত একটি মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যখন আলোচকেরা এসব তথ্য তুলে ধরছিলেন, তখন হয়তো দেশের নানা প্রান্তে চিকিৎসাবঞ্চিত ডায়াবেটিক শিশুরা আর্তচিৎকার করছিল। বিশেষজ্ঞদের তথ্য বলছে, বহু নবজাতক টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস নিয়ে জন্মাচ্ছে। এই শিশুদের দিনে পাঁচ-ছয়বার ইনসুলিন দিতে হয়। প্রতিবার ইনসুলিন দেওয়ার আগে রক্তে শর্করার পরিমাণ মাপতে হয়। সময়মতো ইনসুলিন না দিলে তাদের জীবন বিপন্ন হয়। এই শিশুরা পরিবার, সমাজ ও স্কুলে বৈষম্যের শিকার হয়। বৈষম্যের নেপথ্যে রয়েছে অবহেলা। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এই নিদারুণ অবহেলা বিদ্যমান আছে।

অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম শিশুদের জন্য বিনা মূল্যে ইনসুলিন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ইনসুলিন-সামগ্রী যেন ভ্যাট ও করমুক্ত হয়, সেই চেষ্টাও তিনি করবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর এই আশ্বাস যত দ্রুত পূরণ হবে, তত দ্রুত আক্রান্ত শিশুরা উপকৃত হবে। সরকারকে বুঝতে হবে, টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রতিটি শিশুর সেবা পাওয়ার অধিকার আছে। অযাচিত করুণা প্রদর্শন করার বদলে তাদের পাওনা অধিকার তাদের বুঝিয়ে দেওয়া দরকার। এর ব্যত্যয় হলে তাদের প্রতি অবহেলা করা হবে। এই অবহেলার অপরাধের মাত্রা গুরুতর।