Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকার পথখাবার

সম্পাদকীয়

সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান থেকেই আমরা জানি যে ঢাকার রাস্তাঘাটে প্রতিদিন যে খাবার আমরা খাই, স্বাস্থ্যের জন্য তা চরম হানিকর। কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের এক গবেষণায়ও বিষয়টি আবার প্রমাণিত হয়েছে। ঢাকার অভিজাত-অনভিজাত দুই ধরনের এলাকারই অন্তত ১৫টি জায়গার প্রায় ১৫০টি পথখাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করে তারা জানিয়েছে, এগুলোতে মারাত্মক মাত্রায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া আছে। প্রতি গ্রামে সহনীয় মাত্রা যেখানে ৩০, সেখানে এসব খাবারে ১ হাজার ১০০টির বেশি টোটাল কলিফর্ম ও ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। ডায়রিয়া, কলেরা থেকে শুরু করে নানা ধরনের রোগবালাইয়ের ডিপো এসব ব্যাকটেরিয়া। অথচ ঢাকার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন এসব খাবার খাচ্ছে।

এ ধরনের কোনো গবেষণার ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশের পর এ প্রতিক্রিয়া হিসেবে সাধারণত কোনো বাছবিচার না করেই উচ্ছেদের পথ ধরা হয়। নীতিটা হচ্ছে মাথাব্যথা? কেটে ফেলো। পথখাদ্য সমস্যা নিরসনেও যে একই নীতি অনুসৃত হতে পারে, তার আভাস এর মধ্যেই ডিসিসি দক্ষিণের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কথায় পাওয়া গেছে, ‘এসব দোকানের অধিকাংশই অবৈধ। এগুলো উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা আছে।’ নিবন্ধন বা অনুমোদনের ব্যবস্থা না থাকায় ঠিক কত লোক এ পেশায় আছেন, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই, তবে এ সংখ্যা কয়েক লাখের নিচে হবে না। এদের উচ্ছেদ করা মানে করোনার এ দুঃসময়ে আরও কয়েক লাখ পরিবারকে পথে বসানো। তা ছাড়া দামে সস্তা ও সহজে পাওয়া যায় বলে ভাসমান মানুষের বড় অংশ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের লোকজন এ খাবারের ওপর নির্ভরশীল। বিকল্প ব্যবস্থা না করে দোকানগুলো উচ্ছেদ করলে এসব মানুষ বিপদে পড়বে।

সাংস্কৃতিক দিক থেকেও এ উচ্ছেদ হবে গর্হিত। সংস্কৃতি শুধু শিল্প, সাহিত্য, ভাষা নিয়ে গড়ে ওঠে না, খাদ্যও সংস্কৃতির অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর এ খাদ্যসংস্কৃতির সদা পরিবর্তমান এক উপাদান পথখাবার। তাই তো পর্যটনে ফুড ট্যুরিজম বা খাদ্য পর্যটন অতি জনপ্রিয় এক ধারা। কোনো একটা বিশেষ জায়গায় বিশেষ কী খাবার পাওয়া যায়, তুলে ধরতে আয়োজন করা হয় এ বিশেষ ট্যুর। এ ধরনের ট্যুরে অভিজাত হোটেলের পাশাপাশি রাস্তার জনপ্রিয় খাবার খাওয়ানোরও ব্যবস্থা থাকে। অনেক পর্যটকই তো এখন ঢাকায় এসে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মিশ্র ফলের ভর্তা খেতে চান। অনেক দেশই তাই এগুলোকে টিকিয়ে রাখতে নানা কিছু করে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, চীন পথখাবার বিক্রির জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা রেখেছে, আছে জীবাণুমুক্ত পানির ব্যবস্থা, মাননিয়ন্ত্রণে নিয়মিত তদারকি।

তাই নিবর্তনমূলক না হয়ে ব্যবস্থা হওয়া উচিত প্রতিকারমূলক। উচ্ছেদ না করে দেখা উচিত কেন খাবারগুলোতে জীবাণু থাকছে, আর কীভাবেই বা করা যায় প্রতিকার। গবেষকেরা বলছেন, মূলত পানি থেকেই খাবারে ব্যাকটেরিয়া যাচ্ছে। খাবার তৈরি ও পরিবেশনের পাত্র, ধুলাবালু, বিক্রেতা-ক্রেতার হাত থেকেও ব্যাকটেরিয়া যায়। তাই এদের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছে দেওয়া গেলে এসব সমস্যার অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব। খাবারের গাড়িগুলো ঢাকা রাখা ও বিক্রেতাদের গ্লাভস পরা বাধ্যতামূলক করার মতো সহজ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া গেলে পথখাবারকে অনেকটাই স্বাস্থ্যসম্মত করা সম্ভব।

আর শুধু ব্যবস্থা নিলেই হবে না, নিবন্ধনের আওতায় এনে এদের তদারকিও করতে হবে। প্রতিটি এলাকায় এদের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করে দিলেও কর্তৃপক্ষের জন্য মাননিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি করা সহজ হবে। পাশাপাশি বিক্রেতাদের সাধারণ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান সম্পর্কে প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য সহায়তা দেওয়া দরকার।