Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণ

পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেই ছাত্রী গত রোববার বিকেলে আবাসিক হল থেকে বেরিয়ে বন্ধুর বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন, অথচ তিনি ফিরে এলেন ধর্ষিত হয়ে। এই শহরটি নারীদের জন্য কতটা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে, এই ঘটনাটি সেই প্রশ্নকে আবার নতুন করে সামনে নিয়ে এল। 

একটি আবাসিক হলের এই ছাত্রী ক্যাম্পাস থেকে মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় যাবেন বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উঠেছিলেন। ভুল রুটের বাসে উঠে পড়ায় তিনি র‍্যাডিসন হোটেলের বিপরীতে গলফ ক্লাবের কাছাকাছি স্থানে নেমে যান। সেখান থেকে তাঁর নির্ধারিত গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অন্য কোনো বাহন ধরার আগেই ওই নির্জন এলাকায় ওত পেতে থাকা এক দুর্বৃত্ত তাঁর মুখ চেপে ধরে নির্জন স্থানে নিয়ে যায় এবং তিনি ধর্ষণের শিকার হন। ছাত্রীটির গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতচিহ্ন থেকে স্পষ্ট যে তিনি প্রতিরোধ করেও ধর্ষককে ঠেকাতে পারেননি। তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, পরে জ্ঞান ফিরে পালিয়েছেন।

ঘটনার শিকার ছাত্রীটি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি যে অসহনীয় শারীরিক ও মানসিক পীড়নের মধ্য দিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন, তাতে এখনই তাঁর কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানা কঠিন। তবে এ রকম একটি অসম্ভব কঠিন পরিস্থিতি তিনি যেভাবে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, যে সাহসিকতায় তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, তাকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। যেকোনো ধর্ষণের ঘটনা একটি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য চরম লজ্জাজনক। এই ঘটনাটিও আমাদের লজ্জার মুখে দাঁড় করিয়েছে। একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ১৮ জন আত্মহত্যা করেছে। আরও উদ্বেগের বিষয় যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৪৪ পুরুষও নির্যাতনের শিকার হন। এর অর্থ সমাজ দুর্বৃত্তদের ‘শাসন’ করতে পারছে না। দুর্বৃত্তরাই সমাজকে ‘শাসন’ করছে।

বাংলাদেশের অবস্থা এখন এমন হয়েছে যে, ঘরে-বাইরে কোথাও নারী নিরাপদ নয়। অথচ ধর্ষণের মতো ঘটনার ক্ষেত্রেও যথাসময়ে বিচার মিলছে না। কুমিল্লায় সোহাগী জাহান তনু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার বিচার দূরে থাক, অপরাধী বা অপরাধীদেরও শনাক্ত করা যায়নি। বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের মামলার কোনো সুরাহা হয়নি। সুবর্ণচরের গণধর্ষণ ঘটনার মামলারও অগ্রগতি নেই। তবে টাঙ্গাইলে রূপা খাতুন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় বেশ দ্রুতই পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূপা খাতুনকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে যাওয়া হয়েছিল। এই ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। 

 ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা অপরাধীকে গ্রেপ্তারের জন্য যে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন, ইতিমধ্যে তা পার হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে না পারলে ও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে না পারলে সমাজে ভুল বার্তা যাবে। অপরাধীরা ধরে নেবে, এমন ঘটনা ঘটিয়েও পার পাওয়া যায়। আমরা অবিলম্বে ধর্ষককে গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি দেখতে চাই।