তরিকুলের চিকিৎসা
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছিল, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে সরকার সেই দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করে নিয়েছে। ঘটনাটি এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু সেটি হয়নি। সরকার যেদিন কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করল, সেদিনই সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনের একশ্রেণির নেতা-কর্মী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালান। এতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী অনেকে আহত হন। আবার পুলিশ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ করতে গিয়েও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নিষ্ঠুর আক্রমণের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম অন্যতম। কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের কর্মীরা হাতুড়ি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। সহপাঠীরা তরিকুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করালেও পরে চিকিৎসা শেষ না করেই কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই আচরণ শুধু নিন্দনীয় নয়, নিষ্ঠুরও। কোনো চিকিৎসাপ্রার্থীর প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের আচরণ করতে পারে, ভাবলেও অবাক হতে হয়। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, তরিকুলের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এমন নয় যে তাঁরা চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারবেন। বর্তমানে সহপাঠীরা চাঁদা তুলে তাঁর চিকিৎসা করাচ্ছেন। চিকিৎসকেরা বলেছেন, হাতুড়ির আঘাতে তরিকুলের হাঁটুর নিচে এক পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। অস্ত্রোপচার না করে তাঁকে সুস্থ করা যাবে না। কিন্তু অস্ত্রোপচার করতে যে অর্থ প্রয়োজন, তার ভার বহন করার সামর্থ্য তরিকুলের পরিবারের নেই।
এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্য ক্ষমাহীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কিংবা প্রক্টর তাঁকে দেখতে যাওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। আমরা অবিলম্বে তরিকুলের সুচিকিৎসার দাবি জানাই এবং এর সব ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই বহন করতে হবে।
দাপ্তরিক ভাষায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ তরিকুলকে ছাড়পত্র দিলেও এটি ছিল সোজা ভাষায় তাঁকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই যে তরিকুলকে ফের ওই হাসপাতালে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।
কোটা সংস্কারের দাবিতে যাঁরা আন্দোলন করেছেন, তাঁরা কেউ আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে কোনো তথ্য জানা নেই। তারপরও পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং রাশেদ খান নামে একজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু যাঁরা শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশে চড়াও হয়ে শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত ও আহত করলেন, তাঁদের বিষয়ে প্রশাসন পুরোপুরি নিশ্চুপ।
আইনশৃঙ্খরা রক্ষাকারী বাহিনীর এই আচরণ আইনের শাসনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন
-
ইজারার পুরো টাকা না দিয়েই গাবতলী পশুর হাট দখল, হাসিল আদায় ডিপজলের
-
সুন্দরবনের আগুন এখনো জ্বলছে, কারণ খুঁজতে কমিটি
-
শত পণ্যের মূল্য নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ আমদানি পণ্যের দাম কী হবে
-
গ্যাস উৎপাদন: কূপ খননে আরও চড়া দাম চায় গাজপ্রম
-
উপজেলা নির্বাচনে ‘অনুগত’ প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয় সংসদ সদস্যরা