Thank you for trying Sticky AMP!!

তিন দিনে ৫৫ ট্রলারে ডাকাতি

তাহলে বোঝা গেল আইনের মারপ্যাঁচ ডাকাতেরা ভালোই বোঝে। ১৬ থেকে ২২ মার্চ ‘জাতীয় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ’ উপলক্ষে সাগরে মাছ ধরা নিষেধ। কিন্তু পেটের পীড়ন আইন মানে না, তাই জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তাঁরা ডাকাতের কবলে পড়ে সব খুইয়ে এখন প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় আছেন। যাঁদের ট্রলার ভাড়া করে তাঁরা মাছ ধরতে গিয়েছিলেন, সেই ট্রলার মালিকেরা আইনগত সহযোগিতা চাইতে পারছেন না, কারণ এখন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ।

যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁরা সহায়তা চাইতে পারছেন না, সেহেতু এই জেলেদের বাঁচানোর দায় আনুষ্ঠানিকভাবে এড়ানোর সুযোগ প্রশাসন পেয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। এতে শেষমেশ লাভের পাল্লা ডাকাতদের দিকেই ভারী হয়েছে। তারা বন্দুকের নলের মুখে টন টন মাছ পাচ্ছে, নগদ টাকাপয়সা পাচ্ছে। আর পাচ্ছে জিম্মি করার মতো নিরীহ কিছু মানুষ। মুক্তিপণ দিতে পারলে এই মানুষগুলোর মুক্তি মিলতে পারে, আবার না–ও মিলতে পারে। আর না দিতে পারলে প্রায় অবধারিত মৃত্যু।

গত তিন দিনে সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলে অন্তত ৫৫টি ট্রলার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। দস্যুরা কোটি টাকার মাছ ও জাল লুট করেছে। দস্যুদের বেদম প্রহারে ১০-১২ জন জেলে গুরুতর আহত হয়েছেন। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য পাঁচটি ট্রলারসহ ১০ জন জেলেকে জলদস্যুরা আটকে রেখেছে।

উপকূলের শান্তি রক্ষায় নিয়োজিত প্রশাসন যে কতটা অসহায় অবস্থায় আছে, স্থানীয় কর্মকর্তাদের ভাষ্যেই তা পরিষ্কার হয়েছে। মৎস্য কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছেন, গভীর সাগরে গিয়ে বিপুলসংখ্যক ট্রলারে অভিযান চালানোর মতো আধুনিক জলযান ও জনবল কোনোটাই তাঁদের নেই। নিজেদের দায় যাতে খানিকটা হালকা করা যায়, হয়তো সে বিষয়টি মাথায় রেখে তঁারা ডাকাতির শিকার হওয়ার জন্য জেলেদের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কয়েক হাজার ট্রলার সাগরে ইলিশ ধরছে। তাঁদের ভাষ্যে যে কারোরই মনে হবে, যেহেতু জেলেরা আইন না মেনে মাছ ধরতে গেছেন, সেহেতু এখন তাঁদের জানমালের নিরাপত্তার দায় উপকূলরক্ষীদের ওপর বর্তায় না।

জেলেরা আইন ভেঙেছেন—সন্দেহ নেই। তার জন্য জেল–জরিমানা প্রাপ্য হলে তঁাদের গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে তাঁরা জলদস্যুর কবলে পড়তে থাকবেন এবং তাঁদের উদ্ধারের ব্যর্থতার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ ঢাল–তলোয়ারহীন নিধিরাম সরদারের গল্প শুনিয়ে যাবে, এটি বাঞ্ছনীয় নয়। আমাদের দক্ষ ও প্রশিক্ষিত নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড রয়েছে। বেপরোয়া জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে জোরালো অভিযান চালানো প্রয়োজন।

বাংলাদেশের জলসীমায় তৎপর অপরাধীদের কাছে এই বার্তা পাঠানো জরুরি যে উপকূল কোনো মগের মুল্লুক নয়, সেখানেও আইনের শাসন জারি আছে।