Thank you for trying Sticky AMP!!

থাইল্যান্ডের শিশুদের উদ্ধার

হাজার বর্ণ, হাজার মত, হাজার গোষ্ঠীতে পৃথিবী যখন শতধাবিভক্ত; যুদ্ধ, হানাহানি, ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, খুন-জখম, ধর্ষণের এই পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে যখন মানুষ দিশেহারা; সভ্যতার পরিণতির কথা ভাবতে গিয়ে যখন সবাইকে শিউরে উঠতে হয়; ঠিক তখনই থাইল্যান্ডের দুর্গম সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় থাকা অন্ধকার গুহা থেকে বিশ্ব-একাত্মতার এক অনন্য আলোর ছটা বিচ্ছুরিত হলো। সেই আলো আরও একবার জানান দিয়ে গেল, সর্বগ্রাসী এই হানাহানির আড়ালে অভিন্ন মানবাত্মা মরে যায়নি। সে আজও বেঁচে আছে।

জলমগ্ন গুহায় ১৫ দিন ধরে আটকা পড়া ১২ জন খুদে ফুটবলার আর তাদের কোচকে উদ্ধারে যখন ডুবুরিরা জীবনবাজি রেখে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন গোটা পৃথিবী এক হয়ে গিয়েছিল প্রার্থনায়। পৃথিবীর সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও সিনাগগে আনুষ্ঠানিক প্রার্থনা হয়তো হয়নি। কিন্তু প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের উপাসনালয়ে প্রার্থনার কমতি ছিল না। গোটা পৃথিবী যেন রুদ্ধশ্বাসে চেয়েছিল গুহাটার দিকে। তিন দিনের লড়াই শেষে যখন সফল অভিযানের চূড়ান্ত খবর এল, তখন উল্লাসের করতালিতে ভেসে গেল আসমুদ্রহিমাচল।

যারা গুহায় আটকা পড়েছিল তাদের তারকাখ্যাতি নেই। তারা রাষ্ট্রনায়ক বা শতকোটিপতির সন্তানও নয়। তারা কালো নাকি সাদা, খ্রিষ্টান নাকি বৌদ্ধ—এসব চিন্তা কারও মাথায় আসেনি। সবাই চেয়েছে মানুষগুলো বাঁচুক। বিপদের মুখে থাকা এই ১৩ জন বিশ্ববাসীর কাছে ছিল শুধুই ‘মানুষ’। এই মহাপৃথিবীর প্রতিটি মানুষই যে অভিন্ন মানবজাতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, সে উপলব্ধির আস্বাদনে তন্ময় হয়েছিল বিশ্ববাসী। মানুষ হিসেবে একাত্ম হওয়ার এমন সুযোগ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা এই সময়ের মানুষের সামনে সচরাচর আসে না।

সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেনসহ বিশ্বের অনেক যুদ্ধকবলিত এলাকায় ঠান্ডা মাথায় বোমা বর্ষণ করে মানুষ মানুষকে মেরে ফেলছে। যুদ্ধ আর হানাহানি মানেই এক আদিম ধ্বংসোন্মত্ততা। এসব কারণে শিশু-নারী-বৃদ্ধসহ লাখো মানুষ মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে না খেয়ে মরছে। গুহায় আটকা পড়া ১৩ জন মানুষের জন্য বিশ্বের যে কোটি কোটি মানুষ এক হয়ে প্রার্থনা করেছে, সেই তারাই কেন লাখো মানুষের জীবন হরণের প্রতিবাদে এক হতে পারবে না? যে কারও উপলব্ধির অন্তর্লোকে এমন প্রশ্ন উঁকি দিতেই পারে। সেই প্রশ্নের জবাব সহজে হয়তো মিলবে না, কিন্তু থাইল্যান্ডের এ ঘটনা বিশ্বভ্রাতৃত্বের ক্ষেত্রে যে নজির সৃষ্টি করল, তা আশা–জাগানিয়া। এ ঘটনা বিশ্ববাসীকে মনে করিয়ে দিয়েছে বিশ্ব-একাত্মতা যেহেতু এখনো আছে, সেহেতু এই যুদ্ধ-হানাহানির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদধ্বনি নিশ্চয়ই উচ্চারিত হবে। গুহার বন্দিত্ব থেকে যেভাবে মুক্তি মিলেছে, সেভাবে অন্ধকারের উৎস থেকেই আলো উৎসারিত হবে।