Thank you for trying Sticky AMP!!

ধর্ষণের পরীক্ষা নিষিদ্ধ

দেশে ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার চলমান দ্বি-অঙ্গুলি বা টু ফিঙ্গার টেস্ট নারীর জন্য অবমাননাকর এবং বৈজ্ঞানিক বিবেচনায় অকার্যকর ও অর্থহীন হওয়ার কারণে হাইকোর্ট তা বাতিল করেছেন। বহু বছর ধরে বাংলাদেশসহ বিশ্বে এই প্রথা বিলোপ করতে মানবাধিকার ও নারী সংগঠনগুলো দাবি জানিয়ে আসছিল। বিলম্বে হলেও বাংলাদেশের উচ্চ আদালত ১২ এপ্রিল এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন।

শুধু নিষিদ্ধ করাই নয়, এ রায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো কী পদ্ধতিতে এ পরীক্ষা করা হবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করার জন্য আদালত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এ নীতিমালা কবে নাগাদ প্রণীত হবে এবং কতটা গুরুত্বের সঙ্গে তার প্রয়োগ ঘটবে, সে বিষয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।  প্রতিবেশী ভারতে ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট তথাকথিত টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করে রায় দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার তা সরকারিভাবে কার্যকর করতে সাত মাসের বেশি সময় নিয়েছিল। কিন্তু আমাদের দেশে এ রিট মামলা নিষ্পত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে ধরনের শৈথিল্য দেখিয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

দ্বি-অঙ্গুলিবিশিষ্ট পরীক্ষা যে অকার্যকর এবং নারীকে বরং উল্টো আরও বেশি নিগৃহীত করে, তা অনুধাবন করার জন্য সরকারকে আদালতের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকার দরকার ছিল না। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকদের আত্মপ্রসাদের শেষ নেই। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নারীর অভিষিক্ত যে সব সময় তাদের দুর্দশা লাঘব এবং নারীত্বের লাঞ্ছনা মোচনের কাজে লাগে না, তার অন্যতম উদাহরণ এই টু ফিঙ্গার টেস্ট চালু থাকা। ২০১৩ সালে হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল ইস্যু করার পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নীতিমালা জমা দেওয়ার জন্য প্রলম্বিত সময় দিয়েছেন। তাদের নির্লিপ্ততার কারণেই জনগুরুত্বসম্পন্ন এ রিট মোকদ্দমাটি নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ সময় লেগে গেল।

রিট আবেদনের আরও পাঁচ বছর পর এসে যখন রায় ঘোষিত হলো, তখনো আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুধুই একটি খসড়া নীতিমালা জমা দিয়েছে। এ নীতিমালায় যদিও তারা প্রচলিত ব্যবস্থাকে অবৈজ্ঞানিক ও ভয়ানক বলে চিহ্নিত করেছে, কিন্তু তারা কবে নাগাদ এটি আইন হিসেবে কার্যকর করবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়নি। হাইকোর্ট আগামী তিন মাসের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা গ্রেপ্তার ও রিমান্ড বিষয়ে আপিল বিভাগের মাইলফলক দিকনির্দেশনা সরকারকে অগ্রাহ্য করতে দেখেছি। আদালতের নির্দেশনার প্রতি উপেক্ষার এ রকম নজির ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হয়। এ ক্ষেত্রেও তার পুনরাবৃত্তি হবে না বলেই প্রত্যাশিত।