Thank you for trying Sticky AMP!!

নদীর পাশে বালুর মজুত

দখলদারেরা চিরকালই প্রভাবশালী ও বেপরোয়া। তাঁদের সঙ্গে সাধারণত ‘অসাধারণ’ মানুষের যোগাযোগ থাকে। এ কারণে তাঁরা সাধারণ মানুষের সমস্যার কথাকে গুরুত্ব দিতে চান না। কিন্তু দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যখন রুখে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না, তখন সাধারণ মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হয়। চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের রামদাসদী এলাকার বাসিন্দারাও প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হয়েছেন। রুখে দাঁড়ানো ছাড়া তাঁদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।

প্রথম আলোয় গতকাল বৃহস্পতিবার ছাপা হওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, রামদাসদী এলাকায় মেঘনা নদীর তীর রক্ষা করতে একটি বাঁধ বানিয়েছে সরকার। এর জন্য খরচ হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। ভাঙনের হাত থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সুরক্ষা দিচ্ছে এটি। নদীর করালগ্রাস বাঁধটিকে এখনো বিপর্যস্ত করতে পারেনি। কিন্তু কিছু মানুষের স্বার্থের ছোবলে তা ভেঙে যেতে বসেছে।

প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, চাঁদপুর ও হাইমচরে নদীর তীর রক্ষার জন্য নির্মিত এই বাঁধের পাশে বিরাট এলাকাজুড়ে বালু মজুত করা হচ্ছে। সিঙ্গাপুরে রপ্তানির জন্য টাঙ্গাইলের যমুনা নদী থেকে জাহাজে করে এখানে বালু এনে রাখা হচ্ছে। এখান থেকে জাহাজে করে সেগুলো চট্টগ্রামে নেওয়া হবে। সেখান থেকে যাবে সিঙ্গাপুরে। টাঙ্গাইলের আহসান উল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ী এই বালু আনছেন।

টাঙ্গাইল থেকে আনা বালু নামানোর জন্য বাঁধের পাশে জেটি বানানো হয়েছে। নদীর পাড় খনন করে জেটি নির্মাণের কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বালুর জাহাজ যাতে সহজে জেটিতে ভিড়তে পারে, সে জন্য বাঁধের পাশে নদীতে ড্রেজিং করা হয়েছে। এতে বাঁধের সিসি ব্লক খসে পড়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের মতো বালুর ঢিবি থেকে পানি চুইয়ে আশপাশের বাড়িঘরে ঢুকছে। বালু উড়ে সেসব বাড়িঘরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, এই বালু ব্যবসায়ী ও তাঁর সহযোগীরা এখানে জেটি বানানোর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অনুমতিই নেননি।

পাউবোর কর্মকর্তা, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের লোকজন গ্রামবাসীর দাবি মানার আশ্বাস দেওয়ার পর তাঁরা আন্দোলন স্থগিত করেছেন। আশা করা যায়, স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্বাসঘাতকতার শিকার হবেন না।

সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে, আর দু-একজন মানুষ প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে সেই প্রকল্পের সুফল থেকে জনগণকে বঞ্চিত করবে—সেটি হতে পারে না। শুধু চাঁদপুর ও হাইমচরে নদীর তীর রক্ষার বাঁধ প্রকল্পের ক্ষেত্রে নয়, একই ধরনের সব প্রকল্পের বিষয়ে সরকারকে এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে হবে। দখলদার মহলকে এই বার্তা দেওয়া জরুরি যে জনগণের অর্থে প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় এবং ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে তা ক্ষতিগ্রস্ত করার যেকোনো চেষ্টা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।