Thank you for trying Sticky AMP!!

নদী নিয়ে আপিল বিভাগের রায়

অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে নদী বাঁচানোর পক্ষে আপিল বিভাগ দৃঢ়তার সঙ্গেই দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু প্রতীয়মান হয় যে বিরাজমান বাস্তবতা ভিন্ন। জাতীয় সংসদ ও সুপ্রিম কোর্ট একদিকে আর দেশের শীর্ষ পর্যায়ের আমলাতন্ত্র আগের মতোই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে।

নদী এক জীবন্ত সত্তা। আর তার অভিভাবক হলো নদী রক্ষা কমিশন। তাই দরকার হলো নদী কমিশনকে শক্তিশালী, স্বশাসিত ও স্বাধীন করা। এর সপক্ষে আমরা বিভিন্ন সময়ে মতামত দিয়ে চলেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে আমরা উদ্বেগজনক তথ্য পেলাম। করোনাকালে গত ১৯ জুলাই মন্ত্রিসভা বিভাগ সন্তর্পণে একটি পরিপত্র জারি করেছে, যা নদী কমিশনের প্রতি একটি বড় আঘাত। কারণ, এই পরিপত্রে নির্দিষ্টভাবে নদী কমিশনের যাবতীয় কার্যক্রম কেবল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আইন পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত’ নদী কমিশনের ব্যবস্থাপনা ও বাজেট কেবল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করার জন্য ‘নির্দেশক্রমে অনুরোধ’ করা হলো। আমরা মনে করি, এই ধরনের ‘অনুরোধ’ করার নির্দেশনা দেওয়ার এখতিয়ার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (সংবিধানে যদিও মন্ত্রিপরিষদ কথাটি নেই, আছে মন্ত্রিসভা) রাখে না।

 নদীকে লিগ্যাল পারসন এবং তার রক্ষাকর্তা হিসেবে নদী কমিশনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে আমরা হাইকোর্টের মাইলফলক রায়টি পেয়েছিলাম গত বছরের জানুয়ারিতে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল বিভাগের রায়টিও আমরা পেয়েছিলাম করোনার আগে, মধ্য ফেব্রুয়ারিতে। চলতি সপ্তাহান্তে পাওয়া গেল পূর্ণাঙ্গ রায়। এতে হাইকোর্টের দেওয়া ১৭টি নির্দেশনার মধ্যে কয়েকটি সংশোধন করা হয়েছে মাত্র। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে নদী বাঁচাতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ভূমিকা এর ফলে কোনোক্রমেই খর্ব বা সংকুচিত হয়নি।

সুতরাং সার্বিক বিচারে গত ১৯ জুলাইয়ের ওই তর্কিত পরিপত্র প্রকারান্তরে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের চেতনায় সরাসরি আঘাত হেনেছে। ২০১৩ সালের জাতীয় নদী রক্ষা আইনটিকে আমরা সর্বদা স্বাগত জানিয়েছি। এই আইনের ১২ ধারায় নদী কমিশনের ১৩টি কার্যক্রম বর্ণিত আছে। কিন্তু এর প্রথমটিতেই বলা আছে, নদীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে সরকারকে সুপারিশ করা। ধারাটিই বলে দিচ্ছে কোনো একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ তাকে রাখা যাবে না। কারণ, নদীবিষয়ক আন্তমন্ত্রণালয় কার্যক্রমের মধ্যে ‘সমন্বয়সাধন’ই কমিশনের ম্যান্ডেট। আর তাই তাকে কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ করা নদী কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য ও চেতনার বিরোধী।

অবশ্য কোনো সন্দেহ নেই, নদী কমিশনকে প্রকৃত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান করতে হলে আইনে বড় সংশোধনী লাগবেই। নদী কমিশনকে আর্থিক স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে এবার এই কাজ দ্রুত সেরে ফেলার দাবি রাখে। আপিল বিভাগ বলেছেন, জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য রক্ষায় কোনো অবস্থাতেই তুরাগ নদ বা দেশের অন্য কোনো নদীর জমি ইজারা বা বিক্রি করা যাবে না।

কিন্তু রূঢ় বাস্তবতা এটাই যে নদী কমিশনের ২০১৮ সালের রিপোর্টে আমরা দেখেছি, সারা দেশে নদীর অবৈধ দখলদারদের সংখ্যা অন্তত ৫০ হাজার। এই জমি পুনরুদ্ধারে নদী কমিশনকে ভূমি, জনপ্রশাসনসহ বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিতে হয়। সে জন্য সরকারের আন্তবিভাগ ও সংস্থাগুলোকে নদী কমিশনের কাছে জবাবদিহির আইনানুগ রক্ষাকবচ থাকতে হবে।

 বিদ্যমান আইন এবং আদালতের রায়ে নদী কমিশনকে নদীরক্ষায় সব ধরনের কাজ করতে বলা হয়েছে। তবে তারা শুধু সুপারিশ করবে এবং তা অগ্রাহ্য করা হলে কী হবে, সেই বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই। আইনে অবিলম্বে সংশোধনী আনা হোক। কিন্তু তার আগপর্যন্ত নদী কমিশনকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ রাখার ‘অনুরোধ’ আমাদের বিস্মিত করেছে। এটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক।