Thank you for trying Sticky AMP!!

নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলা

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটি মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় এক শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারী যুবক যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন, আমরা তার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। হামলায় নিহত ৪৯ জন, যাঁদের মধ্যে অন্তত ৩ জন বাংলাদেশি আছেন। আমরা তাঁদের আত্মার শান্তি ও তাঁদের শোকসন্তপ্ত স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও আন্তরিক সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। যে ৪০ জনের বেশি লোক গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, আমরা তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।

হামলার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডেন বলেছেন, ‘এটা পরিষ্কার যে এখন এই ঘটনাকে শুধু সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসেবেই বর্ণনা করা যায়।’ যেসব বিশ্বনেতা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন, তাঁরাও এটাকে সন্ত্রাসবাদী হামলা বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু কোনো সরকার বা রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই এই নারকীয় গণহত্যাযজ্ঞকে ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ বলে অতি সহজেই চিহ্নিত করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস-এ হত্যাযজ্ঞের বিবরণ দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে: মসজিদের ভেতরে ইবাদতরত মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে লাশের স্তূপে পরিণত হওয়ার পরও বন্দুকধারী শ্বেতাঙ্গ যুবক তাঁদের ওপর উপর্যুপরি গুলি চালিয়েছেন। আহত হয়ে যাঁরা হামাগুড়ি কিংবা বুকে ভর দিয়ে এদিকে-সেদিকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন, বন্দুকধারী যুবক খুঁজে খুঁজে তাঁদের ওপর আবারও গুলি চালিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নারীরা ছিলেন, এমনকি শিশুরাও ছিল।

এই নারকীয় গণহত্যাযজ্ঞ ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ই বটে। কিন্তু এত কাল পশ্চিমা বিশ্ব যে তথাকথিত ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদ’ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থেকেছে, এটা তা নয়; বরং এবার মুসলমানরাই হামলার শিকার হয়েছে খোদ ইবাদতগৃহের অভ্যন্তরে, ইবাদতরত অবস্থায়। ইউরোপ-আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ-খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দেশগুলোসহ পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের তুলনায় দক্ষিণ গোলার্ধের নিউজিল্যান্ড এত কাল ছিল অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ ও জাতিগোষ্ঠীগত সম্প্রীতির দেশ। দেশটির আধুনিক ইতিহাসে এত বড় গণহত্যাযজ্ঞের ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। কিন্তু শুক্রবারের ঘটনার পর পরিষ্কার হয়ে গেল, সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শের চরমপন্থী রূপ ও ধর্মীয়-বর্ণবাদী উগ্রপন্থার সহিংস প্রকাশের ঝুঁকি থেকে পৃথিবীর কোনো অঞ্চলই আজ আর নিরাপদ নেই। বৈশ্বিক পরিসরে সমগ্র মানবজাতির জন্যই এটা গভীর উদ্বেগের বিষয়।

শুক্রবারের হামলাকারী ২৮ বছর বয়সী শ্বেতাঙ্গ যুবক ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং জানা গেছে, তিনি একজন অস্ট্রেলীয় নাগরিক। নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের প্রায় সব মূলধারার সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, টারান্ট মসজিদে ইবাদতরত মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন এবং সেই দৃশ্য ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেছেন মুসলমানদের প্রতি শ্বেতাঙ্গ চরমপন্থী ঘৃণায় তাড়িত হয়ে। ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত ক্যামেরা হেলমেটে বেঁধে হত্যাযজ্ঞের চলমান ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করা বা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুধু মুসলমানদের প্রতি ঘৃণাই ছড়ানো হয়নি, ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের সরকারি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, হামলাকারী ব্রেনটন টারান্ট ৭৪ পৃষ্ঠার একটি বিবৃতি লিখেছেন, যেখানে তাঁর সম্ভাব্য রোল মডেল হিসেবে বেশ কয়েকজন শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী গণহত্যাকারীর নাম আছে; মুসলমানদের প্রতি তাঁর ঘৃণার প্রকাশ হিসেবে আছে ইসলাম ধর্ম প্রসারের প্রথম দিকে মুসলমানদের সঙ্গে খ্রিষ্টানদের ক্রুসেডের উল্লেখ।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এত কাল যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে আসছে, তার প্রধান লক্ষ্য তথাকথিত ইসলামি সন্ত্রাসবাদ। কিন্তু এখন স্পষ্টতই তাদের সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা প্রসারিত করতে হবে: শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী সন্ত্রাসবাদসহ খ্রিষ্টীয় ও জাতীয়তাবাদী যেসব সহিংস ও বিদ্বেষমূলক ভাবধারা উত্তর-দক্ষিণ উভয় গোলার্ধের দেশে দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তাদের সবাইকে মোকাবিলা করার মিলিত প্রয়াস নিতে হবে।