Thank you for trying Sticky AMP!!

নির্যাতন ও যৌন হয়রানি

ঈদের পর গত দুই দিনের পত্রিকায় যেসব নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানির খবর ছাপা হয়েছে, তা রীতিমতো রোমহর্ষ। কোনো কোনো ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতিত নারীর স্বজনকে জীবন দিতে হয়েছে। আবার কোনো কোনো ঘটনায় লোকলজ্জার ভয়ে আক্রান্ত ও লাঞ্ছিত মেয়েটি আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। এসব খবর কিসের আলামত?

উদাহরণ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কলেজছাত্রীর কথা বলা যায়। তাকে শিমুল নামের এক বখাটে উত্ত্যক্ত করতেন। মেয়েটির মামা ইকরাম হোসেন ইউএনও তথা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রতিকার চাইলে তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আট মাসের কারাদণ্ড দেন। এরপর শিমুল কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে সহযোগীদের নিয়ে ইকরামকে হত্যা করেন। অন্যদিকে সাতক্ষীরায় মাদ্রাসাছাত্রীকে প্রতিবেশী এক কিশোর উত্ত্যক্ত করলে মেয়েটি বাবার কাছে নালিশ করে। এরপর বখাটের পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়েটির বিয়ের বয়স হয়নি বলে মেয়ের পরিবার সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিলে ওই বখাটে মেয়েটির ঘরে ঢুকে তার গালে ছুরির পোঁচ দিয়ে পালিয়ে যায়। চট্টগ্রামে ধর্ষণের কারণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন এক প্রতিবন্ধী তরুণী। তরুণীর মা গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এ সুযোগে মুহাম্মদ আলী নামে এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় তাঁকে ধর্ষণ করেন। এখন প্রতিবন্ধী তরুণী কার কাছে বিচার চাইবেন? চাঁদপুরে এক কলেজছাত্রী, যাঁর স্বামী বিদেশে থাকেন; হাসান পাটোয়ারী নামের এক তরুণ তাঁর আপত্তিকর ছবি তুলে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করেন। তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে দুটি ভাষ্য আছে। একটি ভাষ্য হলো মেয়েটি আত্মহত্যা করেছেন। অপর ভাষ্য হলো তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।

এই কয়টি ঘটনা প্রমাণ করে, আমাদের সমাজে ঘরে-বাইরে মেয়েরা কোথাও নিরাপদ নয়। কখনো আত্মীয়তার সুযোগে, কখনো ক্ষমতা ও সামাজিক প্রতিপত্তি দেখিয়ে নানাভাবে মেয়েদের হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হলে অনেক সময় প্রতিবাদকারীকে জীবন দিতে হয়। এসব ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা খুব কমই ধরা পড়ে। আবার ধরা পড়লেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসে। 

এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে আইন কদাচিৎ সক্রিয় হলেও সামাজিক প্রতিরোধ নেই। ফলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অপরাধীরা সাজা খাটলেও তাদের মধ্যে অনুশোচনার লেশমাত্র নেই। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হলে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনও জোরদার করতে হবে। 

পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয় বলে যে বাংলা প্রবাদটি আছে, সেটি অন্তত এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এখানে পাপীকেও ঘৃণা করতে হবে। সামাজিকভাবে তাদের বর্জন করতে হবে।