Thank you for trying Sticky AMP!!

নিয়োগ কেলেঙ্কারি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য আবদুস সোবহান মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে ১৪১ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ দিয়ে রেকর্ড তৈরি করেছেন। এই নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মী যেমন আছেন, তেমনি আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজন এবং উপাচার্য যাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে সুবিধা নিয়েছেন।

ব্রিটিশ আমলে জমিদারেরা আইনকানুনের তোয়াক্কা করতেন না, স্বেচ্ছাচারী কায়দায় জমিদারি চালাতেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুস সোবহানও একই পদ্ধতিতে দুই দফায় আট বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চালিয়েছেন। প্রথম মেয়াদে অনিয়ম-দুর্নীতি করার ক্ষেত্রে কিছুটা রাখঢাক থাকলেও দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আর সব ক্ষেত্রে সাবেক উপাচার্য ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসন আইনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

শেষ কর্মদিবসের নিয়োগ কেলেঙ্কারির আগে আবদুস সোবহান নিজের জামাতা ও কন্যাকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি সংশোধন করে প্রার্থীর যোগ্যতা শিথিল করেছিলেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে ভবন দখল করে রাখাসহ আরও অনেক গুরুতর অভিযোগ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তদন্ত করে নিয়োগে অনিয়ম খুঁজে পায়। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই নিয়োগ বাতিল ঘোষণা করে এবং নতুন কোনো নিয়োগ না দেওয়ার নির্দেশ জারি করে। কিন্তু উপাচার্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাচারী কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে গেছেন। সেই সময় সাবেক উপাচার্য ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এর আগে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও তদন্ত করা হয়। তিনি তখন নিজের অপরাধ ঢাকতে ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষামন্ত্রীকে আক্রমণ করলেও তাঁর বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তাহলে এসব উপাচার্যের খুঁটির জোর কোথায়? তাঁরা কি আইনের ঊর্ধ্বে? যদি তা না হয়ে থাকে, একজন উপাচার্য কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউজিসিকে চ্যালেঞ্জ করেন? আরেকজন উপাচার্য শিক্ষামন্ত্রীকে গালাগাল করেন? এ রকম নখদন্তহীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা রাখার যৌক্তিকতা দেখি না। ইউজিসি তদন্ত তদন্ত খেলা খেলবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় লোকদেখানো নির্দেশনা দেবে, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা সেসব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবেন, এ হতে পারে না। উপাচার্য নামের এসব ব্যক্তির হাতে শিক্ষা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—কোনোটি নিরাপদ নয়।

একসময় দেশের পণ্ডিত ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে বরিত হতেন। এখন মেধা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার স্থান নিয়েছে অন্ধ দলানুগত্য। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ইউজিসি কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তোয়াক্কা করেন না। তাঁরা জানেন ইউজিসি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাঁদের চাকরি খেতেও পারবে না, দিতেও পারবে না।

বর্তমানে এক ডজনের বেশি স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে ইউজিসি। এর মধ্যে ১০ জন বর্তমান ও সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কিছু তদন্ত শেষ হয়েছে। দু-একটি প্রতিবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

আবদুস সোবহান বিদায়বেলা যে নিয়োগ কেলেঙ্কারি করে গেছেন, তার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। সব অবৈধ নিয়োগ বাতিল হোক। উপাচার্য পদে থেকে যে ব্যক্তি দেশের আইনকানুন ও রীতিনীতি উপেক্ষা করেছেন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে।