Thank you for trying Sticky AMP!!

নেপথ্যের হোতাদেরও খুঁজে বের করতে হবে

সম্পাদকীয়

রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে আন্তদেশীয় অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রের পাঁচ সদস্য ধরা পড়েছে, এটি বড় খবর না হলেও এর মধ্য দিয়ে অপরাধী চক্রের যে সুলুক সন্ধান পাওয়া গেছে, তা নিঃসন্দেহে বড় খবর। এ চক্রের মূল হোতা আকুল হোসেন যশোরের শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। তাঁরা এ পর্যন্ত দুই শতাধিক অস্ত্র বিক্রি করেছেন, যা আনা হয়েছে সীমান্ত পথে ভারত থেকে। প্রতিটি অস্ত্র কেনা হয় ২৮ থেকে ৫০ হাজার টাকায় এবং বিক্রি করা হয় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, বুধবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন ইলিয়াস হোসেন, আবুল আজিম, ফজলুর রহমান ও ফারুক হোসেন। তাঁদের কাছ থেকে আটটি বিদেশি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগাজিন, আটটি গুলি ও একটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়। আকুল হোসেন ২০১৯ সালেও অস্ত্রসহ বেনাপোল থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জামিনে বেরিয়ে একই কাজে ফিরে যান তিনি।

সম্প্রতি রাজধানীর ভাষানটেকে এক ঠিকাদারকে গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার ও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর অস্ত্রের উৎস অনুসন্ধানে নেমে চক্রটির সন্ধান পায় ডিবির গুলশান বিভাগ। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অস্ত্র ও মাদকের বড় চালানগুলো ঢোকে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে। এ ছাড়া যশোরের চৌগাছা, ঝিকরগাছা, শার্শা, দর্শনা, শাহজাদপুর, হিজলা, আন্দুলিয়া, মান্দারতলা, বেনাপোলের সীমান্তের গোগা, কায়বা, শিকারপুর, দৌলতপুর, দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র দেশে ঢুকছে।

গত বছর বিজিবি সদস্যরা চোরাই পথে আসা ৭৭টি পিস্তল, আটটি ওয়ান শুটারগান, একটি একে-৪৭ রাইফেল, তিনটি রিভলবার, ১১টি এয়ারগান, তিনটি পাইপগান, আটটি ওয়ান শুটার পিস্তল, একটি দোনলা বন্দুক, ৭৬টি ম্যাগাজিন ও ৩৭২টি গুলি উদ্ধার করেছে। তবে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের পরিমাণ যে অনেক বেশি, তার প্রমাণ আকুল চক্রের কাছে পাওয়া এবং তাঁদের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া অস্ত্র।

আকুল চক্রের ঘটনা বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ২০১৯ সালে বমাল ধরা পড়ার পরও তিনি কীভাবে জামিনে বেরিয়ে এলেন? তাঁর রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক কারা? এ চক্র কাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছে এবং কারা এ অস্ত্রের ক্রেতা? যে সীমান্তের দুই পাশে কঠোর পাহারা, চোরাচালানি দেখলেই ভারতীয় রক্ষীরা গুলি করে জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেয়, তাঁদের দৃষ্টি এড়িয়ে এসব অস্ত্রের চালান এল কীভাবে?

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। বিজিবি বা কোস্টগার্ড সদস্যরা সীমান্ত পথে কিছু অস্ত্র আটক করার তালিকা পেশ করে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে পারেন। তাতে এ অবৈধ অস্ত্রের চালান আসা বন্ধ হবে না। তাই অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালান বন্ধ করতে হলে আকুলদের নেপথ্যের হোতাদেরও ধরতে হবে। বিস্ময়কর হলো অস্ত্রসহ আকুল ধরা পড়ার পরও সেখানকার ছাত্রলীগ তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তাহলে কি তাঁরা এ অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার হোতাকে রাজনৈতিকভাবে সুরক্ষা দিচ্ছেন? সরকারি দলের নেতারা কথায় কথায় ষড়যন্ত্র ও অন্তর্ঘাত খুঁজে বেড়ান। এবার নিজেদের দিকে চোখ ফেরান।