Thank you for trying Sticky AMP!!

পদ্মায় স্পিডবোটে ভাড়া-নৈরাজ্য

দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি-মঙ্গলমাঝির ঘাট নৌপথে চলাচল করে কমপক্ষে আড়াই শ স্পিডবোট। এই পথে স্পিডবোটে পারাপার নিয়ে যা হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তাকে ‘নৈরাজ্য’ বললে কম বলা হবে। এমনিতে চলাচলকারী স্পিডবোটের নিবন্ধনহীনতা, চালকের অদক্ষতা, যাত্রীদের সবাইকে লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ না করা ইত্যাদি অনিয়ম এবং এসব অনিয়মজনিত দুর্ঘটনার বিষয়টি এতটাই নৈমিত্তিক চেহারা পেয়েছে যে তা একরকম সর্বজনগ্রাহ্য নিয়মের পর্যায়ে চলে গেছে। এর বাইরে ভাড়া নিয়ে যা হচ্ছে তাকে ‘ছিনতাইবাজি’ ছাড়া কিছু বলা যায় না। শিমুলিয়া মুন্সিগঞ্জের লৌহজং, কাঁঠালবাড়ি মাদারীপুরের শিবচর ও মঙ্গলমাঝির ঘাট শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় অবস্থিত। এই পথে স্পিডবোটে প্রতিদিন অন্তত চার হাজার যাত্রী পারাপার করা হয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে বিআইডব্লিউটিএর নির্ধারিত ভাড়া ১৩০ টাকা হলেও ভোর ছয়টা থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হয় ১৬০ টাকা। এরপর বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হয় ২০০ টাকা। এই নৌপথে ইজারা থাকলেও শিমুলিয়া-মঙ্গলমাঝির ঘাট নৌপথে কোনো ইজারাই নেই। কিন্তু মঙ্গলমাঝিতে এক ব্যক্তি ভাড়া আদায় করেন যাত্রীপ্রতি ১৫০ টাকা।

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথের এই ভাড়া–নৈরাজ্য নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যা বলছে, তা আরও ভয়াবহ। এ বিষয়ে মাওয়া নৌবন্দরের বিআইডব্লিউটিএর বন্দর কর্মকর্তারা বলেছেন, ইজারা দেওয়ার বিষয়টি তাঁদের এখতিয়ারে আছে ঠিকই, কিন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কি না, তা তাঁদের দেখার বিষয় নয়। এটি প্রশাসনের দেখার কথা। তাঁরা বলছেন, বিষয়টি তাঁরা স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার জানিয়েছেন, কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না। অন্যদিকে, মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেছেন, স্পিডবোটের ঘাটের ইজারা ও ব্যবস্থাপনা করে বিআইডব্লিউটিএ। সেখানে কোনো অনিয়ম থাকলে তারা ব্যবস্থা নেবে। এখানে জেলা প্রশাসনের কিছু করার নেই। মানে, বিআইডব্লিউটিএ কিংবা প্রশাসনের কেউ যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়ার নামে টাকা ছিনতাই করে নেওয়ার বিষয়টি দেখভালে বিশেষ আগ্রহী নয়। অন্যদিকে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক আবু তাহের বলেছেন, মঙ্গলমাঝির ঘাট থেকে টোল বাবদ যে টাকা আদায় করা হয়, সে তথ্য তিনি জানেনই না। এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে যাত্রীরা কী ভয়ানক অবস্থার মধ্যে আছে, তা সহজেই আন্দাজ করা যায়।

এই পথে স্পিডবোটে প্রতিদিন অন্তত চার হাজার যাত্রী পারাপার হওয়া মানে মাসে এখানে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। আর প্রশাসন বলছে, এটি দেখা তাদের দায়িত্ব নয় কিংবা তারা বিষয়টি জানেই না। প্রশাসনকে অবিলম্বে এই বিস্ময়জাগানিয়া অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে। নইলে তাদের এই ‘না জানা’ সরকারের সব উন্নয়নকাজকে ধ্বংস করে দেবে।