Thank you for trying Sticky AMP!!

পাঁচ মিনিটে সংযোগ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাইকোর্ট ২০১২ সালে একজন বিদ্যুৎগ্রাহকের অভিযোগ আমলে নিয়ে রায় দিয়েছিলেন, যেসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ–সংযোগ পরিকাঠামো রয়েছে, সেখানে আবেদনের এক মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ–সংযোগ দিতে হবে, অন্যথায় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এই রায়কে ওই সময় সবার পক্ষ থেকে সর্বান্তঃকরণে সমর্থন জানানো হয়েছিল, কারণ যেকোনো পরিষেবা সংস্থা গ্রাহকদের কাছে দায়বদ্ধ।

পরিষেবা সংস্থাগুলো যে গ্রাহকদের কাছে দায়বদ্ধ, তা আমরা যেন ভুলেই গেছি। বাংলাদেশে বাসগৃহে বিদ্যুৎ–সংযোগ পেতে একসময় চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো। সেই ভোগান্তির মাত্রা এখন হয়তো কিছুটা কমেছে কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। আবেদন করার পর বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের ‘সম্মানজনক উৎকোচ’ দিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করার বহু প্রাচীন রীতি এখনো গ্রাহকদের অনিবার্যভাবে অনুসরণ করতে হয়।

আশার কথা হলো, সেই অনিয়মের ‘ঐতিহ্যে’ ব্যত্যয় এনেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। বহু বছর ধরে চলে আসা অনিয়মের অবসান ঘটাতে দৃষ্টান্তযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। পত্রিকান্তরে জানা যাচ্ছে, দেশের গ্রামাঞ্চলে গতকাল শনিবার থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৮০০ রিকশা-ভ্যান নেমেছে। এসব ভ্যান বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। ভ্যানগুলোতে থাকছে বিদ্যুতের মিটার, তারসহ নতুন বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার সব সরঞ্জাম। গ্রাহক বিদ্যুৎ-সংযোগ চাইলে আবেদন ফরম পূরণসহ তাৎক্ষণিক সব প্রক্রিয়া শেষে মাত্র ৫ মিনিটেই দেওয়া হচ্ছে নতুন সংযোগ।

যেখানে জনসাধারণকে বিদ্যুতের জন্য লাইন দিতে হয়, দিনের পর দিন ভোগান্তি পোহাতে হয়, সেখানে এই উদ্যোগ অনেকেরই কল্পনার বাইরে। এই বিরল কাজের জন্য প্রথম প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি হলেন ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শেখ আবদুর রহমান। তিনি ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ নামের একটি নিরীক্ষাধর্মী কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এটি শুরু করেন। শুরুর পর প্রথম চার দিনে হরিণাকুণ্ডু সমিতি ৫৪টি নতুন সংযোগ দিয়েছে।

আবদুর রহমানের এই নিরীক্ষাধর্মী কার্যক্রম পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দীনের দৃষ্টিগোচর হয়। খবরটি দেখে তিনি খোঁজ নেন এবং বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপকদের (জিএম) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। তিনি প্রতিটি সমিতি থেকে অন্তত ১০টি করে রিকশা-ভ্যান নামিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। ভালো উদ্যোগকে মডেল হিসেবে নিয়ে দ্রুত উদ্যোগী হয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানও অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। তাঁর এই সদিচ্ছার কারণে হয়রানি, ভোগান্তি ও বাড়তি অর্থ খরচ ছাড়াই গ্রাহকেরা সংযোগ পাচ্ছেন।

হরিণাকুণ্ডু জোনাল অফিসের এজিএম শেখ আবদুর রহমান এই বিকল্প উদ্যোগের নাম দিয়েছেন ‘আলোর ফেরিওয়ালা, পল্লী বিদ্যুৎ দুয়ার মিটারিং কার্যক্রম’। প্রায়োগিক দিক বিবেচনায় এই নামটি যথার্থ। অন্য পরিষেবা খাতেও এ রকম আলোর ফেরিওয়ালারা এগিয়ে এলে দেশ যে এগিয়ে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই।