Thank you for trying Sticky AMP!!

পানিসংকটে জীবন বিপন্ন

সম্পাদকীয়

যে জনপদটি নদীমাতৃক বাংলাদেশ নামে পরিচিত, ফি বছর বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টি হয়; সেই জনপদে সুপেয় পানির সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও স্বীকার করতে হবে, দেশের বিভিন্ন জনপদে পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়ে যায়, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে।

পানির এ সংকটের মূলে আছে ভূগর্ভস্থ পানির যথেচ্ছ ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক উৎসগুলো বন্ধ করে দেওয়া। নির্মম হলেও সত্য, আমরা সাময়িক সুবিধার জন্য ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছি। বিশেষ করে ঢাকা শহরে দৈনিক যে ২২ লাখ ঘনমিটার পানির প্রয়োজন, তার সিংহভাগই আসে ভূগর্ভস্থ পানি থেকে। যদি ঢাকাবাসীর পানির চাহিদা ভূপৃষ্ঠের উৎস থেকে জোগান দিতে পারতাম, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিছুটা হলেও নিরাপদ থাকত। এ ছাড়া কৃষিতে আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদের ফলে সেচযন্ত্রের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে হচ্ছে। এসব কারণে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে।

বাংলাদেশে সুপেয় পানির সংকট কমবেশি সব এলাকাতেই আছে। তবে দক্ষিণাঞ্চল ও পাহাড়ি জনপদে সমস্যা অনেক গভীর। দক্ষিণাঞ্চলের পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার পানি পান করা কঠিন। আগে পুকুর কেটে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করা যেত। এখন সেই সুযোগ বলতে গেলে নেই। বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের ৮০ লাখ মানুষ উচ্চ প্রাকৃতিক ঝুঁকিতে আছে। ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লাখে পৌঁছাতে পারে বলে গবেষকেরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। অন্যদিকে পাহাড়ি জনপদের মানুষকে বছরের প্রায় পুরো সময় পানির সংকটে কাটাতে হয়। সেখানে সুপেয় পানির উৎস ছিল পাহাড়ি ছড়া ও ঝরনা। কিন্তু সমতল থেকে যাওয়া একশ্রেণির পাহাড়খেকো মানুষ উন্নয়নের নামে পাহাড় ও বন ধ্বংস করে ফেলছে। তাদের এ ধ্বংসযজ্ঞ কেবল পাহাড়িদের সুপেয় পানির উৎসই বন্ধ করে দিচ্ছে না, তাদের জীবনকেও করে তুলছে বিপন্ন।

মরুভূমি বা অনাবৃষ্টির দেশে সুপেয় পানির সংকট মেনে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু যে জনপদে অসংখ্য নদী-নালা, হাওর–বাঁওড়, খাল–ডোবা ইত্যাদি আছে, যেগুলো প্রকৃতির পানির উৎস, সেই জনপদে কেন পানির সংকট হবে? এ সংকটের মূলে আছে আমাদের ভুল উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি। ঢাকা ওয়াসা, চট্টগ্রাম ওয়াসাসহ যেসব প্রতিষ্ঠান বিশাল জনগোষ্ঠীর পানির চাহিদা মিটিয়ে থাকে, সমস্যা সমাধানে তাদের কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই। স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি যেসব পরিকল্পনা আছে, তা–ও তাঁরা বাস্তবায়ন করতে পারেন না। বহু বছর ধরেই শুনে এসেছি, ঢাকা ওয়াসা ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে ভূপৃষ্ঠস্থ উৎস থেকে পানির জোগান বাড়াবে। কিন্তু তাদের কথা ও কাজের মিল সামান্যই। ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করার কারণে ঢাকা শহরে পানির স্তর বিপজ্জনক অবস্থায় চলে এসেছে।

ভূপৃষ্ঠস্থ পানির প্রধান উৎস উজান থেকে আসা নদীর পানি ও বৃষ্টি। গঙ্গা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ভাটিতে বাংলাদেশের অবস্থান। আমাদের আন্তসীমান্ত ৫৭টি নদী আছে। এক গঙ্গা ছাড়া কোনো নদীর পানিবণ্টনে কোনো চুক্তি নেই। আমাদের পানির ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করতে তিস্তাসহ সব নদীর পানিবণ্টনে দ্রুত চুক্তি হওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ভূপৃষ্ঠস্থ পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পানির উৎসের ক্ষতি হয়, এমন কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া যাবে না।