Thank you for trying Sticky AMP!!

পানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো

একসঙ্গে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ার উদাহরণ তেমন নেই। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন করে এবং ঢাকা ওয়াসা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। বিইআরসি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে অন্তত লোকদেখানো গণশুনানি করেছিল। ঢাকা ওয়াসা গণমাধ্যমের মুখোমুখি না হয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে।

প্রশ্ন উঠেছে, যখন বাজারের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সীমিত আয়ের মানুষ অসহায়, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্প খাত ঝুঁকিতে, তখন বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানো কতটা যৌক্তিক? বিইআরসির চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন করে দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন যে বিদ্যুৎ খাতের লোকসান কমানোর জন্য তাঁরা এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর বিপরীতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল না। সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও পিডিবি বছরে ৫০০ কোটি টাকা লাভ করেছে, যা আইনানুযায়ী করতে পারে না। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিডিবির দায়িত্ব হলো জনগণকে সেবা দেওয়া, মুনাফা করা নয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ বিভাগ অনুৎপাদনশীল খাতে যে ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে, তা বন্ধ করতে পারলে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি বোঝা চাপাতে হতো না। অন্যদিকে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্পের উদ্যোক্তারা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, এতে বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতসহ অনেক শিল্পের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে।

বিইআরসির চেয়ারম্যান সৌজন্যবশত বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পক্ষে কিছু কথাবার্তা বলেছেন। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সেই সৌজন্য দেখানোরও প্রয়োজন বোধ করেনি। যে প্রতিষ্ঠানটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানের কাছে তা আশাও করা যায় না। কিন্তু প্রতিটি সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর পদাধিকারীরা ভোক্তা তথা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। ঢাকা ওয়াসা আইনের ঊর্ধ্বের কোনো প্রতিষ্ঠান নয়।

উদ্বেগের বিষয় হলো, সরকার এমন এক সময়ে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়াল, যখন চাল, চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুনসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। চীনের সাম্প্রতিক কোরোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব ইতিমধ্যে আমাদের অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়লে সেই প্রভাব যে আরও কষ্টকর হবে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে শিল্পগ্রাহকদের কাছ থেকে যে বাড়তি অর্থ পাবে, তা শিল্পের মালিকেরা নিজেদের গাঁট থেকে দেবেন না। তঁারা উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়িয়ে উশুল করে নেবেন। অর্থাৎ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে শেষ বিচারে ভোক্তাদের ওপরই আর্থিক চাপ বাড়বে; বিপুলসংখ্যক নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও কমে যাবে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যবসায়ী সংগঠন পানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ করেছে। সরকারের উচিত এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা। বিদ্যুৎ ও পানির দাম না বাড়িয়ে ওই দুটি খাতে যে বিপুল অপচয় ও দুর্নীতি হচ্ছে, তা বন্ধ করতে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

সেবা প্রতিষ্ঠানের পদাধিকারীদের ব্যর্থতা, অদক্ষতা ও অপচয়ের দায় কেন জনগণের ওপর চাপানো হবে?