Thank you for trying Sticky AMP!!

পাসপোর্ট-ভিসা ব্যবস্থা দর্শন

বিদেশে স্থায়ী কূটনৈতিক মিশন রাখা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। কিন্তু বিশ্বের ছোট–বড় অধিকাংশ দেশই সর্বাধিকসংখ্যক দেশে কূটনৈতিক মিশন চালু রাখতে সচেষ্ট থাকে। এর অন্যতম লক্ষ্য কূটনীতি ও বাণিজ্য ছাড়াও দরকারি সব বিষয়ে সার্বক্ষণিক তথ্য সংগ্রহ এবং সর্বশেষ অগ্রগতির বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে ওয়াকিবহাল থাকা। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বিদেশের মিশনগুলোর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের পথ খোলা থাকা সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি তথ্য সংগ্রহে বিদেশ সফর করার ব্যয়বহুল পরিকল্পনা নিল কেন?

বিশেষ করে কমিটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ এমন সব দেশ সফরে যেতে চাইছে, যার প্রতিটিতেই বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন রয়েছে। এমনকি এসব মিশনে নির্দিষ্টভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা শাখা বা উইং রয়েছে। অবশ্য সফরের দরকার পড়তেই পারে না, সেটা যুক্তি নয়। অকাট্য যুক্তি বরং এটাই যে আগে দেখতে হবে কমিটি যে উদ্দেশ্যে যেতে চাইছে, সেই বিষয়ে তারা সংশ্লিষ্ট মিশনসমূহের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই কতটা কী অর্জন করেছে। আমরা জানতে পারি না যে কমিটি ইতিমধ্যেই তাদের জিজ্ঞাসা এবং অনুসন্ধানের বিষয় নির্দিষ্ট করেছে। এটাই সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক।

কারণ, তারা তাদের লক্ষ্য এবং আগ্রহ চূড়ান্ত করতে না পারলে জনগণ বুঝতে পারবে না যে তারা কেন একসঙ্গে নয়টি দেশ সফর করবে। নয়টি দেশের পাসপোর্ট ও ভিসা ব্যবস্থাসংক্রান্ত অনেক তথ্য সংগ্রহের উৎস কেবল বাংলাদেশি মিশন নয়। ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কূটনৈতিক মিশনও আছে। সংসদীয় কমিটি অতীতে কখনো তাদের সঙ্গে আদৌ কোনো আলোচনায় গিয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। সুতরাং যেখানে কোনো হোমওয়ার্ক থাকবে না, সেখানে আকস্মিকভাবে করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলেই বিদেশে উড়াল দেওয়ার মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।

বিশেষ করে আমজনতার মনে খটকা জাগবে। তাদের মনে পড়বে, সরকারি খরচে অহেতুক বিদেশ সফর কি তাহলে বন্ধ হবেই না? করোনাকাল কেটেই গেলেই তো অর্থনীতিতে করোনার অভিঘাত মুছে যাবে না। করোনা বরং বিশ্বে একটা মহামন্দা এনে দিতে পারে। সুতরাং এখন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মিতব্যয়ী হওয়া এবং কৃচ্ছ্রসাধনের সময়।

বিদেশ সফরের যৌক্তিকতা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি সরকারের আমলে সন্দেহ-সংশয় দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির বিদেশ সফর নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। সেটা ঘটেছে বলেই প্রধানমন্ত্রী এবং অব্যবহিত পর সাবেক অর্থমন্ত্রী বিদেশ সফর বিষয়ে অনুশাসন দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী যথার্থ মনে করেন, বিদেশ সফরের ব্যয় সংসদের বাজেট থেকেই মেটানো উচিত। অর্থমন্ত্রীর মত ছিল, মন্ত্রণালয়ের টাকায় সাংসদদের বিদেশ সফর আর্থিক শৃঙ্খলার বরখেলাপ। আসলে বিষয়টি ক্ষমতার পৃথক্‌করণের চেতনার সঙ্গেই সাংঘর্ষিক। সংসদীয় কমিটির কাজ হলো মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহি করা। কিন্তু তাদের অর্থে বিদেশে ‘বেড়ানো’ হলে, নৈতিক জোরটা বিশেষভাবে থাকে না। এখানে স্বার্থের সংঘাত ঘটে।

বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে পাসপোর্ট ও ভিসা ইস্যু কার্যক্রম সরেজমিন দেখার বিষয়টি আপাতদৃষ্টে সব বিবেচনায় হাস্যকর। এর বিপরীত ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে কমিটিকে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে হবে, যাতে মানুষ আশ্বস্ত হতে পারে যে বিদেশ সফর মানে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির একধরনের বিলাসিতা নয় অথবা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের করের টাকায় একশ্রেণির সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষের বিদেশে দ্রষ্টব্য স্থান দেখা বা শপিংয়ের সুযোগ করে নেওয়া নয়। আসলে এটি যতটা না সরকারি অর্থ ব্যয়ের বিষয়, তার থেকে অনেক বেশি জোরালোভাবে নৈতিকতার প্রশ্ন জড়িত। নৈতিকতায় বড় সংকট দেখা দিলে রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলায় ধস অনিবার্য।