Thank you for trying Sticky AMP!!

পিইসি-জেএসসি আর নয়

এখন অক্টোবর মাস। ডিসেম্বরে শিক্ষাবর্ষ শেষ। অথচ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এখনো জানে না চলতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাটি (পিইসি) হবে কি না। নীতিনির্ধারকদের এই সিদ্ধান্তহীনতায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মহা দুশ্চিন্তায়। করোনার কারণে চলতি বছর জেএসসি হবে না, সে কথা শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়ে দিয়েছে।

সরকার ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে যে নতুন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে, তাতে দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা হয়নি। উল্লেখ্য, ২০০৯ সাল থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পিইসি ও ২০১০ সালে অষ্টম শ্রেণিতে জেএসসি পরীক্ষা চালু করে সরকার। সেই থেকেই পরীক্ষা দুটি চলে আসছে শিক্ষাবিদসহ নানা মহলের বিরোধিতা ও আপত্তি সত্ত্বেও। তবে ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের কারণে পরীক্ষা দুটি হতে পারেনি। এতে শিক্ষার্থীদের মনে আশা জেগেছিল যে পরীক্ষার বাড়তি চাপ থেকে তারা রেহাই পাবে। কিন্তু অক্টোবরে এসেও পিইসির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত না আসা দুর্ভাগ্যজনক।

পিইসি ও জেএসসির পক্ষে সরকারের একমাত্র যুক্তি হলো, এর ফলে শিশুশিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। যদি তা সত্যও হয়ে থাকে, সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। শিশুদের আত্মবিশ্বাস জাগানোর নানা পথ আছে। শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি পরীক্ষা চাপালে তাদের শিক্ষার মান বাড়ে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, বরং পরীক্ষার কারণে কোচিং ও গাইড বইয়ের ব্যবসা জমজমাট হয়েছে। পরীক্ষা সামনে রেখে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে না গিয়ে কোচিংয়ে সময় কাটায় কিংবা বাড়িতে প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়ে। অধিক পরীক্ষা মানে অধিক জ্ঞানার্জন নয়, বরং অধিক প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করা।

শিক্ষার এই গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকার নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করেছে, যেখানে যৌক্তিকভাবেই দশম শ্রেণি বা এসএসসিতে শিক্ষার্থীদের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সরকার যদি নিজের ঘোষিত শিক্ষাক্রমকে অমান্য না করে, তাহলে কোনোভাবে উচিত হবে না পিইসি ও জেএসসিতে পাবলিক পরীক্ষা বহাল রাখা।

শিক্ষা নিয়ে সরকারের কথা ও কাজে মিল সামান্যই। সরকার ২০১০ সালে ঢাকঢোল পিটিয়ে যে নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণা করেছিল, তাতে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি। ১৯৭৪ সালে প্রণীত ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনেও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার কথা ছিল। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকেরা সেই দুরূহ পথে না গিয়ে শিশুশিক্ষার্থীদের ওপর অন্যায়ভাবে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা চাপিয়ে দিলেন।

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবসে রাজধানীতে বাংলাদেশ ইউনেসকো জাতীয় কমিশন আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন জেএসসি ও পিইসি পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মঞ্জুর আহমদও বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাদ দেওয়ার কথা বললেও কাজ হয়নি। অন্য দিকে পিইসি পরীক্ষার বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।

কেবল নতুন শিক্ষাক্রম নয়, সার্বিকভাবে শিক্ষার স্বার্থে শিশুশিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমানো প্রয়োজন। কেননা, এসব পরীক্ষার কারণে কোচিং-নোটবই ব্যবসার স্ফীতি ছাড়া শিক্ষার্থীদের কোনো লাভ নেই। জেএসসির মতো পিইসি পরীক্ষাও বাতিল করা হোক।