Thank you for trying Sticky AMP!!

পুকুর বাঁচাতে নদ ঘোরানো

ঐতিহাসিক, পুরাতাত্ত্বিক বা জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো স্থাপনা রক্ষার জন্য রাস্তা ঘুরিয়ে দেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। স্থাপনার গুরুত্ব বিবেচনায় প্রকৌশলীরা সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে সমন্বয় করে অনেক সময় এটি করে থাকেন। কিন্তু নদের পাড়ের এক ব্যক্তির পুকুর বাঁচাতে আস্ত নদের গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। এই নজিরবিহীন ঘটনা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মাসলিয়া ও হাসিলবাগ গ্রামের মাঝামাঝি জায়গায় ঘটেছে বলে সংবাদপত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে। নদের জায়গা দখল করে বানানো পুকুর উচ্ছেদ না করে উল্টো সেই পুকুরকে টিকিয়ে রাখার পাকাপাকি বন্দোবস্ত করার প্রয়াস যেকোনো বিবেচনায় অনৈতিক ও অবৈধ।

প্থম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, দীর্ঘ সময় দখল করে নানা স্থাপনা করায় ভৈরব নদটি প্রায় ভরাট হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) যশোর কার্যালয় নদটি খননের কাজ শুরু করেছে। এ জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার ২৮২ টাকা। বর্তমানে বারোবাজার এলাকার হাসিলবাগ ও মাসলিয়া এলাকায় এই খননকাজ চলছে। বারোবাজার থেকে দক্ষিণে মাসলিয়া আর হাসিলবাগ গ্রামের মধ্য দিয়ে নদ বয়ে গেছে। এই দুই গ্রামের মধ্যবর্তী জায়গায় খনন চলছে। দেখা যাচ্ছে, সিদ্দিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তির হাসিলবাগ মৌজায় নদের মধ্যে একটি পুকুর রয়েছে। পাউবোর কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতেই পুকুরটির একটি বিরাট অংশ নদ দখল করে আছে। কিন্তু খনন করার সময় দেখা যাচ্ছে, খননপথের নকশা থেকে পুকুরটি বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে পুকুরের উল্টো দিকে অর্থাৎ নদের অপর পাড়ের লোকজনের জমিতে ড্রেজিং করা হচ্ছে। সেই মাটি সিদ্দিকুরের পুকুরের পাড়ে ফেলা হয়েছে। এতে অন্তত ১০ জন স্থানীয় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ১০ জন কৃষক ছাড়াও এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা অবিলম্বে তদন্তের মাধ্যমে সমাধানের দাবি করেছেন। পাউবো কর্মকর্তাদের লিখিতভাবেও তাঁরা জানিয়েছেন। কিন্তু আজও কোনো ফল পাননি। উল্টো এই অভিযোগ করায় সিদ্দিকুর তাঁদের হুমকি দিচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা বলছেন, পুকুরের মালিকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে পাউবোর কিছু অসৎ কর্মকর্তা এভাবে নকশা করেছেন।

পাউবোর যশোর কার্যালয়ের প্রকৌশলীরা বলছেন, এই নকশা পাউবোর প্রধান কার্যালয় থেকেই করা। তাঁরা স্বীকার করছেন, সিদ্দিকুরের পুকুরটির এক-তৃতীয়াংশ নদের মধ্যে রয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে ধরে নেওয়া যায়, যে প্রকৌশলীরা মাঠপর্যায়ে মাপজোখে নিয়োজিত ছিলেন, তাঁদের দেওয়া প্রতিবেদনের কারণেই এমন নকশা হয়েছে।

এখন যেহেতু লিখিত আকারে অভিযোগটি তোলা হয়েছে, সেহেতু এ বিষয়ে পাউবোর কেন্দ্র থেকে এর তদন্ত হওয়া দরকার। অভিযোগটি যেহেতু গুরুতর, সেহেতু গুরুত্ব দিয়ে এর তদন্ত করা হোক।