Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রকৃতির গতি বুঝে আবাদ

একটা সময় ছিল যখন চাষাবাদ ছিল জুয়া খেলার মতো। কৃষক চেয়ে থাকতেন আকাশের দিকে। যে বছর ঠিকঠাক বৃষ্টি নামত, সেই বছর ফলন ভালো হতো। কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক খেলে যেত। যে বছর অতিবৃষ্টি কিংবা অনাবৃষ্টি হতো, সে বছর ফসল মার খেত। অসহায় কৃষক হাহাকার নিয়ে সেই আকাশের দিকেই চেয়ে থাকতেন। প্রকৃতির কাছে তিনি জিম্মি ছিলেন।

এখন দিন বদলেছে। উন্নত বিশ্ব তো বটেই, আমাদের এশিয়ার দেশগুলোতেও এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে কৃষি। বিজ্ঞানীরা মেঘের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছেন। এসব পূর্বাভাস আমলে নিয়ে ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও চীন তাদের কৃষিকে নতুনভাবে সাজাচ্ছে। এ ছাড়া মাটির আর্দ্রতা বুঝে সেচ দেওয়া, বন্যার পূর্বাভাস মাথায় রেখে কোন ফসলের জাত কোথায় চাষ করা হবে তা ঠিক করা, কবে কোথায় খরা হবে তা আগেভাগে জানা—গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়গুলো সামনে রেখে এসব দেশের কৃষকেরা কাজ করছেন। সেই দৌড়ে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে।

এটা ঠিক, আমাদের কৃষিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে; নতুন নতুন যন্ত্রপাতি যুক্ত হয়েছে এবং নতুন নতুন জাতের ফসল আমাদের বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করছেন। গত এক দশকে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়েছে। কিন্তু প্রযুক্তির সহায়তায় প্রকৃতির গতিবিধি বুঝে চাষাবাদের বিষয়টি হাতে গোনা দু-একটা বাণিজ্যিক কৃষি খামারের শিক্ষিত কৃষক জানলেও আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের কৃষকেরা এখনো জানেন না। তাঁদের কাছে এই তথ্যসুবিধা পৌঁছে দেওয়া দরকার।

চলতি সপ্তাহে (গত সোম থেকে বুধবার) নেপালের কাঠমান্ডুতে জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষির সম্পর্কবিষয়ক সম্মেলনে এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে। বিশ্বের ২৫টি দেশের শতাধিক বিজ্ঞানী-গবেষক এতে অংশ নেন। বাংলাদেশ থেকে বিজ্ঞানীদের একটি দলও এতে অংশ নেয়। দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নদী ও আবহাওয়াকেন্দ্রিক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সেই দিক থেকে সম্মেলনটি আমাদের কৃষি খাতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই অঞ্চলের অনেক দেশে মেঘের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে কোথায় কী পরিমাণ বৃষ্টি হতে পারে তা আগেভাগে বলে দেওয়া হয়। সেইমতো চাষিরা চাষাবাদ করেন।

আমাদের দেশে আবহাওয়ার পূর্বাভাস সাধারণভাবে দেওয়া হলেও বিশেষভাবে কৃষকদের কথা মাথায় রেখে চাষাবাদবান্ধব পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে সরকারের মাথায় নেওয়া দরকার। ওই সম্মেলনে অংশ নেওয়া নাসার একজন বিজ্ঞানীর ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ২২টি দেশের ফসল চাষের অগ্রগতি ও উৎপাদনের চিত্র নিয়মিত নাসা থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং এসব তথ্য নাসা তাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত প্রকাশ করে। এসব তথ্য সরকারি কর্মকর্তারা এবং গণমাধ্যম কাজে লাগাতে পারে।