Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রতীক্ষার ডাকসু নির্বাচন

দীর্ঘ ২৮ বছর পর আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং ১৮টি হল ছাত্র সংসদের নির্বাচন হচ্ছে, এটি নিঃসন্দেহে আনন্দের সংবাদ। তবে শঙ্কাও আছে। এই নির্বাচন এমন সময়ে হচ্ছে, যখন জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচন নিয়ে আমাদের রাজনীতি মহা ঘূর্ণিচক্রে আবর্তিত। কে এম নূরুল হুদা কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক এখনো চলছে। এই নির্বাচন নিয়ে যে অভিজ্ঞতা দেশবাসীর হয়েছে, তাতে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ হারানো খুবই স্বাভাবিক। বর্তমানে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের যে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে তাতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অনেক দলই অংশ নিচ্ছে না। ফলে নির্বাচন কমিশনও ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের হিসাবেই ভোট পড়েছিল ৩১ শতাংশ, যা ঢাকা সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

আশার কথা, ডাকসু নির্বাচনের চিত্রটি এখন পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনের বিপরীত। ডাকসুর ভিপি পদে ২১ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৪ জনের প্রার্থিতাই প্রমাণ করে, এই নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কতটা আগ্রহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। যদিও হলগুলো দীর্ঘ সময় ধরে সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনটির দখলে থাকায় ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো সংগঠন হল সংসদে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পারেনি। ফলে হল সংসদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী সব ছাত্রসংগঠনই তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নীতি, শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে।

এই নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই যে অবস্থান নিয়েছে, তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষার বিপরীত হিসেবে বিবেচনা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ ছাড়া প্রায় সব ছাত্রসংগঠন আবাসিক হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছিল। এর পেছনে যুক্তি ছিল হলগুলো ছাত্রলীগের দখলে থাকায় ভোট প্রভাবিত হতে পারে। কর্তৃপক্ষ তাদের কথা আমলে নেয়নি। ভোটকেন্দ্রে সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রবেশের ওপর বিধিনিষেধ আরোপও অগ্রহণযোগ্য এবং তা স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিপন্থী। ভোট গ্রহণের সময় বাড়ানোসহ ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশের দাবিতে গতকাল পর্যন্ত কয়েকটি ছাত্রসংগঠন উপাচার্য ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে। ভোট গ্রহণের সময় নির্ধারিত আছে সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা। এত অল্প সময়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ভোট গ্রহণ সম্ভব নয় বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। যখন অধিকাংশ ছাত্রসংগঠন ভোটের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে, তখন কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের অনড় অবস্থান নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এসব সত্ত্বেও আমরা আশা করতে চাই যে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে বাধাগুলো অপসারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। মনে রাখতে হবে, একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাই তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি এই চ্যালেঞ্জ সততা ও সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেশবাসীও তাদের অভিনন্দিত করবে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় রাজনীতিতে যতই টানাপোড়েন থাকুক না কেন, শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক ধারা চালু হবে। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে অন্যান্য উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পথ সুগম হবে। জাতীয় নির্বাচনসহ অন্য নির্বাচনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ায় ডাকসু নির্বাচনকে এখন একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশা ও ভরসাস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর ব্যত্যয় ও নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ হলে শুধু ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর নয়, দেশবাসীরও আশাভঙ্গ ঘটবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এর দায় নিতে হবে।