Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রাচীন ভবন সংস্কারে বাধা

ঐতিহ্য ও আধুনিকতায় ভারসাম্য থাকা দরকার। শত বছরের ঐতিহ্য ধারণ করা ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিবেচনাপ্রসূত মূল্যবান ভবন শুধু উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত পরিসরের প্রয়োজনে সংগতিহীন কায়দায় সংস্কার করা যেমন দুরস্ত নয়, তেমনি ঐতিহ্য অবিকৃত রাখার অজুহাতে সম্পূর্ণরূপে সংস্কাররহিত রেখে সেই ভবনকে অধিকতর ক্ষয়িষ্ণুতার মধ্য দিয়ে কালের গলিত গর্ভে হারিয়ে যেতে দেওয়াও অবিবেচনাপ্রসূত।

ফরিদপুরের সালথায় সেবাশ্রম হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া একটি ভবনের সংস্কার প্রশ্নে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এ চিরায়ত দ্বন্দ্ব এসেছে। সেখানে বাবুবাড়িখ্যাত একটি প্রাচীন ভবনে রাধাগোবিন্দ সেবাশ্রম নামের একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ভবনে সংস্কার করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছে। স্থানীয় লোকজনের একাংশ ভবনটি ভাঙার বিরোধিতা করে মানববন্ধন করেছেন। অন্যদিকে সেবাশ্রম পরিচালনা কমিটি জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছে, তারা ন্যায্যত সংস্কারার্থে নিজ মালিকানাধীন ভবনটির একাংশ ভাঙতে চায়, কিন্তু মশিউর মাতুব্বর নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা ব্যক্তিগত স্বার্থে লোকজনকে উসকানি দিয়ে সেই কাজে বাধা দিচ্ছেন।

জেলা প্রশাসনে পেশকৃত আবেদনে উল্লেখিত তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল একটি দোতলা পাকা বাড়িসহ ১ একর ৪৫ শতাংশ জমি দলিলমূলে কিনে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাউশখালী শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দির নির্মাণ করেন। ওই সময় থেকে তাঁরা ওই বাড়ির নিচতলায় রাধাগোবিন্দ বিগ্রহ স্থাপন করে পূজা করে আসছেন। সম্প্রতি ভবনের ছাদ ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ায় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মশিউর মাতুব্বর তাতে বাধা দেন। তিনি সেবাশ্রমের ৫ শতাংশ জমি দখল করে রেখেছেন বলে তারা অভিযোগ করেছে এবং মশিউর তার সত্যতা প্রথম আলোর কাছে স্বীকারও করেছেন।

যেহেতু ভবনটি প্রাচীন এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর ঐতিহ্যিক অনুভূতির সঙ্গে এর কাঠামোগত অস্তিত্বের প্রবল যোগসূত্র আছে, সেহেতু তঁারা আবেগের জায়গা থেকে ভবনের দোতলা ভেঙে সেখানে নতুন কাঠামো দাঁড় করানোর বিরোধিতা করেছেন। সম্মিলিত জনতার এ অনুভূতিকে পুঁজি করে অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্মাণকাজে বাধা দিচ্ছেন কি না, সেটিও তদন্ত করা দরকার। আশ্রমের জায়গা দখল নিয়েও তদন্ত হওয়া উচিত। আর যেহেতু সেবাশ্রমে থাকা লোকদের থাকার ঘর প্রয়োজন, সেহেতু ভবনের আগের আদল ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সংগতি রেখে সংস্কারকাজ করে ‘শ্যাম ও কুল’ দুই-ই রাখা যায় কি না, সেটি সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা হোক।