Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রাণঘাতী ছিনতাইকারী

ঈদ সামনে রেখে ঢাকা শহরে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। গত বুধবার ছিনতাইকারীদের হাতে জীবন দিলেন সুনীতা রানী দাস নামের এক নারী। সকাল ছয়টার দিকে তিনি বড় বোনের ছেলে সুজিতকে সঙ্গে নিয়ে রিকশায় মুগদা এলাকার বৌদ্ধমন্দিরে যাচ্ছিলেন। কমলাপুর বাস ডিপোর কাছে প্রাইভেট গাড়িতে থাকা ছিনতাইকারীরা চলন্ত রিকশা থেকে সুনীতার ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় রিকশা থেকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। সুনীতাকে আহত অবস্থায় প্রথমে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সকাল ১০টায় তাঁর মৃত্যু হয়।

সুনিতা রানী দাস সপরিবার মুগদার গোপীবাগ ঋষিপাড়ায় থাকতেন। তাঁর স্বামী সুজন চন্দ্র দাস অসুস্থ এবং তিন সন্তান বেকার। সুনীতার সামান্য আয়েই সংসার চলত। এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

ছিনতাইকারীদের হাতে সুনীতা রানী দাসের মৃত্যুর ঘটনা অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। ছিনতাইকারীরা প্রাইভেট গাড়িতে নির্বিঘ্নে ছিনতাই করে পালিয়ে গেল অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টেরই পেলেন না! তাহলে কমলাপুর বাস ডিপোর মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কি অরক্ষিত? আরও উদ্বেগের বিষয় হলো এ ধরনের ছিনতাই-চুরি-ডাকাতি-হত্যার ঘটনা কেবল কমলাপুর এলাকায় ঘটছে না; এর আগে জানুয়ারি মাসে হাইকোর্টের সামনে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান হামিদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। এ ঘটনার পর ডিএমপি রাজধানীতে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছিল। ছিনতাইকারীদের রুখতে যদি শহরে সাঁড়াশি অভিযানই চলবে, তাহলে এভাবে বেঘোরে মানুষ মারা যাবে কেন?

পুলিশের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ছিনতাই মামলা হয়েছে ৭৮টি। ২০১৯ সালে ১১৯টি। আর ২০২০ সালে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৬টি। তবে ভুক্তভোগীদের মতে, ছিনতাইয়ের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। ঢাকার সিএমএম আদালতের জিআর খাতার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১০ বছরে শাহবাগ, রমনা, মতিঝিল, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরাসহ ১৫টি থানা এলাকায় ছিনতাই হয় অপেক্ষাকৃত বেশি।

গত এপ্রিলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রেক্ষাপটে লকডাউন শুরু হলে শহরে জনগণের যাতায়াত অনেকটা কমে যায়। ঈদ সামনে রেখে মার্কেটগুলো আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে চালু হয়েছে গণপরিবহনও। এ অবস্থায় চোর-ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়বে, সন্দেহ নেই। বিশেষ করে সড়ক ও মার্কেটগুলোতে এরা ওত পেতে থাকবে। এ অবস্থায় সড়ক ও মার্কেটগুলোতে পুলিশি টহল বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

সুনীতা রানী দাস ছিনতাইকারীদের হাতে জীবন দিলেন। তাঁর সন্তানেরা এতিম হলো। একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি মারা যাওয়ায় পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। সরকার, সিটি করপোরেশন কিংবা বেসরকারি কোনো সংস্থা সহায়তায় এগিয়ে এলে সুনীতা রানী দাসের অসুস্থ স্বামী ও বেকার তিন পুত্র হয়তো বেঁচে থাকার একটি অবলম্বন পেতে পারেন।

অবিলম্বে সুনীতা রানী দাসের ঘাতকদের গ্রেপ্তার করা হোক, বিচার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। জননিরাপত্তার জন্য পুলিশি টহল বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে প্রকাশ্যে এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের সময়েই তারা ধরা পড়ে।