Thank you for trying Sticky AMP!!

বঙ্গবন্ধু চেয়ারে উপাচার্য নিজেই!

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদটি সৃষ্টি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা ও তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে। যে ব্যক্তি এই পদে নিযুক্ত হবেন, বলাই বাহুল্য যে তাঁর মূল কাজ হবে গবেষণা। এই পদে নিয়োগের নীতিমালায়ও সেটাই বলা হয়েছে: বঙ্গবন্ধু চেয়ারে যিনি বসবেন, তাঁর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ২০ বছরের গবেষণাকাজ থাকতে হবে, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে অন্তত ১০টি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা–প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে হবে। কিন্তু এসব শর্ত পূরণ না করে এই পদে নিয়োগের জন্য গঠিত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর নাম সুপারিশ করেছে এবং তিনি গত বৃহস্পতিবার এই দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদের কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন।

এটা শুধু বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে নিয়োগের নীতিমালার লঙ্ঘনই নয়, অশোভনও বটে। কারণ, উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর বঙ্গবন্ধু বিষয়ে একটিও প্রকাশিত গবেষণা–প্রবন্ধ নেই। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর যেসব কলাম বা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো গবেষণা–প্রবন্ধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। সে কারণে তাঁরই বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে তাঁকে নিয়োগের সুপারিশ নিয়মসম্মত হয়নি।

 বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদটি প্রশাসনিক; এই পদে নিয়োজিত থেকে গবেষণা করা ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণা–প্রবন্ধ রচনা করা সম্ভব নয়, উপাচার্যের কাছ থেকে এমন প্রত্যাশাও করা হয় না। তাহলে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে খোদ উপাচার্যকেই কেন বসতে হবে, এটা খুব যুক্তিসংগত প্রশ্ন। উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী নিজেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন, এটা স্পষ্টই বোধগম্য। কারণ, এই পদে নিয়োগদানের জন্য গঠিত ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার নির্বাহী কমিটি’র সভাপতি তিনি নিজেই এবং তাঁর নাম সুপারিশ করেছে ওই কমিটিই।

স্বস্তির বিষয়, উপাচার্যের এই দৃষ্টিকটু আগ্রহ ও সুস্পষ্ট অনিয়ম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক নীরবে মেনে নেননি, তাঁরা বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক প্রথম আলোকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী নিয়মকানুন ভঙ্গ করে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ারে’ আসীন হয়েছেন। এমনকি উপাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার নির্বাহী কমিটি’র অন্যতম সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য শিরীণ আখতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। কারণ, তিনি মনে করেন, নিয়োগের প্রক্রিয়াটি নিয়ম অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয়নি। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে সিন্ডিকেটের সভায় কোনো আলোচনা হয়নি, নিয়োগের প্রক্রিয়াটি একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমেও সম্পন্ন করা হয়নি। আমরা এই নিয়োগ বাতিল করে নীতিমালা অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একজন প্রকৃত গবেষককে বঙ্গবন্ধু চেয়ারে নিয়োগদানের আহ্বান জানাচ্ছি।’