Thank you for trying Sticky AMP!!

বজ্রনিরোধক যন্ত্র স্থাপন

সরকারের নীতিনির্ধারকেরা ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে এর প্রতিকারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছিলেন। তখন এক কোটি তালগাছ লাগানো এবং বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বজ্রনিরোধক যন্ত্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু চার বছর পর এসে দেখা গেল, কাজির গুরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই।

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছেন, জমির আইলে তালগাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তঁারা। আর বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রনিরোধক যন্ত্র লাগানোর বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, প্রকল্পটি ব্যয়বহুল হওয়ায় দেরি হচ্ছে। অর্থের জোগান হলেই কাজ শুরু হবে।

এর অর্থ হলো অদূর ভবিষ্যতে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু বন্ধ বা কমানোর ক্ষেত্রে কোনো সুখবর নেই। দুর্যোগ ফোরামের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যস্ত বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা ১২৩ থেকে ৩৫০–এ উন্নীত হয়। ২০১৭ সাল থেকে মৃত্যুর সংখ্যা কমতে থাকে। ২০১৯ সালে ২৩১ জনে নেমে আসে। অথচ চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৯-এ।

 দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ৩৫ লাখ তালগাছ লাগানো হয়েছে বলে দাবি করেছে। তাদের দাবি যদি সঠিকও হয়ে থাকে, সেগুলো বজ্রপাত নিরোধ করার অবস্থায় আসেনি। একটি তালগাছ বড় হতে ১০ বছর সময় লেগে যায়। দ্বিতীয়ত, তালগাছ যেখানে লাগানোর কথা, সেটাও হয়নি। তালগাছ লাগানো হয়েছে প্রধানত রাস্তার পাশে। রাস্তায় বজ্রপাতে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা খুবই কম। মানুষ মারা যায় মাঠে, বিশেষ করে চাষাবাদের সময় কৃষকেরাই বেশি বজ্রপাতের শিকার হন। দেখা যাচ্ছে তালগাছ লাগানোর স্থান নির্বাচনেও ভুল হয়েছে।

এ ব্যাপারে সরকারের কাজের অগ্রগতি হলো বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া, এই পরিমাণ খুবই সামান্য। অন্যদিকে যঁারা বজ্রপাতে আহত হয়ে জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে আছেন, তঁাদের পুনর্বাসন ও সহায়তার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মাথায় নেই।

সরকার যখন বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তখন এর প্রতিকারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ভিয়েতনাম বজ্রপাত নিরোধক টাওয়ার তৈরি করে সুফল পেয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও নেপালের তরা এলাকায় তালগাছ লাগানোয় বজ্রপাতের হার অনেক কমেছে।

বজ্রনিরোধক যন্ত্র না বসানোর জন্য আর্থিক সংকটের দোহাই দিয়েছেন মন্ত্রী। চারদিকে এত বড় বড় প্রকল্প আর নানা অপচয়ের খবরের ভিড়ে মানুষ বাঁচানোর কাজে যখন অর্থের সংকটের দোহাই দেওয়া হয়, তখন তা খুবই হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। সারা দেশে একই মাত্রায় বজ্রপাত হয় না। হাওর, উত্তরাঞ্চলসহ যেখানে বেশি হয়, সেখানে বজ্রনিরোধক যন্ত্র বসানোর কাজটি জরুরি ভিত্তিতে শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে ভাবতে হবে বজ্রপাতে আহত মানুষের পুনর্বাসনের কথাও।