Thank you for trying Sticky AMP!!

বর্ষা ও পাহাড়

আমাদের দেশে বর্ষাকালের সঙ্গে পাহাড়ের সম্পর্ক এখন শত্রুতার। ভারী ও একটানা বর্ষণে পাহাড়ে ধস নামে। এটা খুব বিপজ্জনক, কেননা পাহাড়ের কোলে অনেক মানুষের বাস। গত বছরের জুন মাসে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, বান্দরবান জেলা এবং চন্দনাইশ ও আরও কয়েকটি উপজেলায় দেড় শর বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। শুধু রাঙামাটিতেই নিহত হয়েছিলেন ১২০ জন। রাঙামাটির সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল; সার্কিট হাউস, জেলা প্রশাসকের বাসভবনসহ ১০টি সরকারি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, বিদ্যুৎ-সংযোগ ছিল না দুই দিন; জ্বালানি ও খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছিল।

গত বছরের এই ট্র্যাজিক অভিজ্ঞতার কথা আমরা স্মরণ করছি এ কারণে যে, সামনে বর্ষাকাল এবং রাঙামাটিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের কোলে অনেক মানুষ এখনো বাস করছেন। ধসে যাওয়া পাহাড়ের কোল থেকে যাঁরা সাময়িকভাবে সরে গিয়েছিলেন, তাঁরা আবার সেসব জায়গায় ফিরে এসেছেন, আবার ঘর বেঁধেছেন পাহাড়ের কোলে। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও তাঁরা সেখানে সপরিবার বসবাস করছেন। তা ছাড়া, পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় কাটার সময় দুদিন আগেই তিন শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে। পাহাড়ধসের প্রধান কারণ পাহাড় কাটা। পরিবেশবিধ্বংসী এই অবৈধ তৎপরতা বন্ধ করার জন্য প্রবল জনমত থাকা সত্ত্বেও পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি।

‘রাঙামাটি এবারও ঝুঁকিতে’ শিরোনামে মঙ্গলবার প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে; প্রতিবেদনটির উপশিরোনাম ছিল ‘চোখ রাঙাচ্ছে বৃষ্টি’। বৃষ্টি এ বছর বেশ আগেভাগেই চোখ রাঙাতে শুরু করেছে এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস এমন যে এবারের বর্ষায় বৃষ্টিপাত অনেক বেশি হতে পারে। ফলে পাহাড় কেটে যেসব জনবসতি গড়ে তোলা হয়েছে, সেগুলোর বাসিন্দাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সময় এগিয়ে আসছে। রাঙামাটির জেলা প্রশাসন ৩১টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে। সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘বসবাস করা নিষেধ’। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা কেউ মানছেন না। কেউ বলছেন যাওয়ার জায়গা নেই, কেউ বলছেন বর্ষার আগে চলে যাবেন, কেউ বলছেন ‘রাখে আল্লাহ, মারে কে’।

ঝুঁকি শুধু রাঙামাটিতেই নয়, টেকনাফ-উখিয়াতেও রয়েছে। ওই অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ দুই লাখ রোহিঙ্গার বর্তমান আশ্রয়স্থলে পাহাড়ধসের ঝুঁকি আছে বলে ঘোষণা করেছে। সরকার তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে হাজার পাঁচেক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উখিয়ার মধুছড়ায় ৫০০ একর পাহাড়ি জমি অধিগ্রহণ করে সেখানকার পাহাড় কেটে রোহিঙ্গাদের থাকার জায়গা তৈরি করা হচ্ছে, ইতিমধ্যে সেখানে ৫০০ পরিবারকে স্থানান্তর করা হয়েছে। এটাও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, পাহাড় কাটার ফলে সেখানেও ধস হতে পারে।
পাহাড়ধসের ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা বাস করছেন, তাঁদের সবাইকে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ জোরালো করতে হবে।