Thank you for trying Sticky AMP!!

বস্ত্রশিল্পের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

সম্পাদকীয়

পৃথিবীজুড়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনব্যবস্থার রূপান্তরের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রচলন ও প্রসারের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে। এ পর্যায়ে যেসব দেশের দৃষ্টি সবচেয়ে দূরপ্রসারী হবে, তারাই সবচেয়ে কার্যকরভাবে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। প্রতিবেশী ভারত তার বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের জন্য যে উদ্যোগের পরিকল্পনা করেছে, তাতে তাদের দূরদর্শিতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেল, সে দেশের সরকার তিন বছরের মধ্যে তাদের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানির সক্ষমতা শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে সাতটি বৃহৎ টেক্সটাইল পার্ক বা বস্ত্রপল্লি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছে। একেকটি বস্ত্রপল্লির আয়তন হবে এক হাজার একর; আর বস্ত্র খাতের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনের জন্য ১০ হাজার ৬৮৩ কোটি রুপি প্রণোদনার ব্যবস্থা করবে।

আর আমাদের সংবাদমাধ্যমের খবর হলো, ভারত সরকারের এ বৃহৎ পরিকল্পনার খবর জানার পর বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের ‘কপালে চিন্তার ভাঁজ’ দেখা দিয়েছে। তাঁদের দুশ্চিন্তা এই যে ভারতের এ বিরাট পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আমাদের তৈরি পোশাকের রপ্তানির বাজার হারানোর আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। কেউ কেউ এটাকে বাংলাদেশের জন্য হুমকি বলে বর্ণনা করেছেন। এ দুশ্চিন্তা অমূলক নয় এবং তা প্রকাশ করায়ও কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু দুশ্চিন্তায় ভোগা এবং তা প্রকাশ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না; বরং ভেবে দেখতে হবে, আমাদের তৈরি পোশাকের রপ্তানির বাজার ধরে রাখতে হলে এখন করণীয় কী।

এটা ভাবতে গেলে আমাদের দেখতে হবে, আমরা এখন কীভাবে চলছি। বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হয় অ্যাডহক ভিত্তিতে, অর্থাৎ উদ্ভূত সমস্যা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দিকে আমাদের যথেষ্ট মনোযোগ নেই। বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণের দিকে নজর নেই। বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোর কাছে মন্তব্য করেছেন, ‘ভারতের বিনিয়োগকে হুমকি ভাবার কিছু নেই। তবে আমাদের চোখ খোলা উচিত। যদিও এই খাতের চাহিদা অনুযায়ী সরকার সাধ্যমতো সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, তবু শিগগিরই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে; অন্যথায় একটা সময় পর আমরা আর এগোতে পারব না।’

আমাদের মনে হয়, এটাই সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি। ভারতসহ বহির্বিশ্বের চলমান পরিবর্তনের দিকে চোখ-কান খোলা রেখে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে আমরা ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছি, তবে তারা বস্ত্র খাতে বেশ শক্তিশালী। নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এ শক্তি তাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতের অগ্রগতির জন্য আরও বেশি সহায়ক হবে। তারা কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনের ওপরও জোর দিচ্ছে, যা আগামী দিনগুলোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। আমাদের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক আমদানি করা তুলার ওপর নির্ভরশীল। তাই কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনের প্রতি আমাদের বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। আর বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্পের অবকাঠামো সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তোলার জন্য চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের শিল্পপল্লিতে যে পোশাকপল্লি গড়ে তোলা হচ্ছে, সেটির মতো এবং সেটির চেয়েও বড় আয়তনের একাধিক বস্ত্র ও পোশাকপল্লি গড়ে তোলার পরিকল্পনা এখন থেকেই শুরু করা উচিত।