Thank you for trying Sticky AMP!!

বাঁধের জন্য পুকুর ধ্বংস নয়

অষ্টাদশ শতকের ইংরেজ কবি স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ লিখেছিলেন, ‘ওয়াটার ওয়াটার এভরিহয়ার ওয়াটার/ নর অ্যানি ড্রপ টু ড্রিংক।’ বাংলা করলে দাঁড়ায়, পানি, পানি—সবখানে পানি, কিন্তু পান করার মতো এক ফোঁটা পানি নেই। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের অবস্থাও অনেকটা এ রকম। বছরের বেশির ভাগ সময়ে তারা পানির সঙ্গে বসবাস করলেও পান করার মতো কোনো পানি নেই। কেননা, সেখানে সমুদ্র বা নদী থেকে যে লবণাক্ত পানি আসে, তা মুখে দেওয়া যায় না।

এখানে সুপেয় পানির প্রধান উৎস পুকুর। বর্ষার দিনে কিছু বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখা হয়, যা তাদের মাস দুয়েকের চাহিদা মেটাতে পারে। বাকি ১০ মাস ওই পুকুরই একমাত্র ভরসা। নদীর লবণাক্ত পানি পৌঁছাতে পারে না, এ রকম স্থানেই গ্রামবাসী পুকুর কেটে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে। কিন্তু পুকুর কাটা অনেক বেশি ব্যয়সাপেক্ষ বলে সব গ্রামে সেটি কাটা সম্ভব নয়। ফলে এক গ্রামে একটি পুকুর থাকলে আশপাশের গ্রামের মানুষও সেখান থেকে তাদের খাওয়ার পানি সংগ্রহ করে। এটাই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।

খুলনার দাকোপ উপজেলার সর্বদক্ষিণের কালাবগী গ্রামে ২০০৭ সালে দীপায়ন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা যে পুকুরটি কেটেছিল, সেটিই এই এলাকার মানুষের সুপেয় পানির একমাত্র উৎস। কিন্তু শিবসা নদীর তীরের পুরোনো বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২০০ গজ ভেতরে গিয়ে যে নতুন বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়, তার ভেতরে ওই পুকুরও পড়ে গেছে। পাউবো পুকুরের পাশে লাল কাপড় টানিয়ে জায়গা অধিগ্রহণের নোটিশও জারি করেছে।

উপকূলীয় এলাকার বাঁধ নির্মাণ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিআইপি) অধীনে পাউবো এই বাঁধ নির্মাণ করছে। এতে উদ্বিগ্ন গ্রামবাসী পুকুরটি রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসক ও পাউবোর কাছে আবেদন জানিয়েছে। পাউবোর কর্মকর্তাদের দাবি, বাঁধ নির্মাণের জন্য বিকল্প জায়গা না থাকায় পুকুরটিতে হাত দিতে হয়েছে। তবে তাঁরা যতটা সম্ভব পুকুরটি রক্ষার চেষ্টা করবেন।

পাউবো কর্মকর্তাদের এই দাবি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। পুকুরের আংশিক জমি বাঁধের ভেতরে গেলে পুকুরটির পানি সুরক্ষিত থাকবে না। অতএব, পুকুরটির কোনো ক্ষতি করা যাবে না। বাঁধ নির্মাণের উদ্দেশ্য নদীর তীরবর্তী মানুষকে রক্ষা করা, তাদের ঘরবাড়ি ও খেতের ফসল নিরাপদ রাখা। কিন্তু এলাকাবাসীর সুপেয় পানির উৎসটি ধ্বংস হয়ে গেলে তারা কীভাবে বাঁচবে? উল্লিখিত পুকুরটি শুধু ওই গ্রামের চাহিদা মেটায় না, আশপাশের বেশ কটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষও এর ওপর নির্ভরশীল।

অতএব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচিত হবে পুকুরটি রক্ষা করেই বাঁধ নির্মাণ করা।