Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার দুই মাস সাত দিনের মাথায় বাংলাদেশে তিন ব্যক্তির দেহে এই ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার খবর জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলো। এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই; কারণ চীনের পর সার্কভুক্ত সব দেশসহ ১০১টি দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে এবং বাংলাদেশেও তা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা বেশ আগে থেকেই প্রকাশ পাচ্ছিল। শুধু তা নয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের তাগিদও বারবার উচ্চারিত হয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যথেষ্ট প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে, তবু সংশয় ও আশঙ্কা থেকেই গেছে। কেননা, এ দেশে সরকারের কথার সঙ্গে কাজের মিল প্রায়ই কম দেখতে পাওয়া যায়। সর্বশেষ ৩ মার্চ বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত যখন মন্তব্য করেন যে করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার জন্য সরকারের প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপগুলো সন্তোষজনক নয়, তখন বিষয়টি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।

যা হোক, যে বিপদ বা সমস্যার মুখোমুখি হতে যাচ্ছি বলে আমরা আশঙ্কা করছিলাম, তা যখন ঘরে হানা দিয়েই ফেলেছে, তখন সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে তা মোকাবিলার চেষ্টা করাই এ মুহূর্তের কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা সুবিধা হতে পারে, যদি আমরা সেই সব দেশের অভিজ্ঞতাগুলোর খোঁজখবর নিই, যারা আমাদের আগে থেকে এ সমস্যা মোকাবিলা করে আসছে। প্রথম আক্রান্ত দেশ চীন এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে প্রথমেই আক্রান্ত ব্যক্তি ও এলাকাগুলোকে বিচ্ছিন্ন করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ইতালিসহ যেসব দেশে অনেক আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঘটেছে, তাদেরও প্রথম অগ্রাধিকার বিচ্ছিন্নকরণ। এটা প্রথম জরুরি কাজ, কেননা করোনাভাইরাস অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে এই কাজটি অত্যন্ত দুরূহ হতে পারে; কারণ আমাদের জনঘনত্ব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সব দেশের তুলনায় অনেক বেশি; আর রাজধানী ঢাকা জনঘনত্বের দিক থেকে বিশ্বের এক নম্বর মহানগর।

কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষকে বিচ্ছিন্ন করার আগে তো শনাক্ত করতে হবে; সেই প্রস্তুতি ও সামর্থ্য কি আমাদের পর্যাপ্ত মাত্রায় আছে? করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণের কেন্দ্র আছে মাত্র একটি এবং সেটা রাজধানী ঢাকায়। প্রশ্ন হলো, একসঙ্গে অনেক মানুষ আক্রান্ত হলে অতি দ্রুত তাদের শনাক্ত করার জন্য এই ব্যবস্থা পর্যাপ্ত কি না। আর ঢাকার বাইরে যারা আক্রান্ত হতে পারে, তাদের শনাক্ত করার ব্যবস্থা কী হবে। বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানকে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কেন্দ্র খোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সরকারের একার পক্ষে এটা সম্ভব কি না, তা ভেবে দেখার বিষয়। করোনাভাইরাস সংক্রমিত দেশগুলো থেকে আসা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা দুর্বল বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এই কাজটিও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে করতে হবে, কারণ করোনাভাইরাস সেসব দেশ থেকেই ছড়াচ্ছে।

এখন পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেশ কম, কিন্তু সংখ্যাটি আরও অনেক বাড়ার আশঙ্কা আছে—এই বিবেচনা মাথায় রেখে রোগীদের সুচিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখতে হবে। আর সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে প্রতিরোধের প্রচেষ্টা ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। এ জন্য ব্যাপক জনসচেতনতা প্রয়োজন। প্রতিরোধের উপায়গুলো সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে চিকিৎসক–বিশেষজ্ঞদের প্রচুর পরামর্শ প্রকাশিত হচ্ছে। ব্যক্তি, পরিবার, প্রতিষ্ঠান সকল পর্যায়ে সেগুলো মেনে চলার মধ্য দিয়ে আমাদের এই সংকট মোকাবিলায় সচেষ্ট হতে হবে।