Thank you for trying Sticky AMP!!

বাজেট ও ব্যাংকমালিক

সরকারের এই একপেশে ও পক্ষপাতমূলক নীতির সমালোচনা চলছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছে, বিনিয়োগ বাড়াতে হলে শুধু ব্যাংক খাত কেন, সব খাতেই করপোরেট কর কমানো প্রয়োজন। বিশেষ করে যেসব খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে, সেসব খাতে করপোরেট কর কমানো হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আছে বলেও খোদ অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন। এর আগে তিনি কোনো কোনো ব্যাংক একীভূত করার কথা বলেছিলেন। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তিনি ব্যাংক কমিশন গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন; যদিও প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন নেই।

এফবিসিসিআই ‘ব্যাংক ডাকাতদের’ শাস্তি দেওয়ার যে দাবি তুলেছে, তা অবশ্যই যুক্তিসংগত। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার, তথা ব্যাংক লুটেরাদের কঠিন শাস্তি না দিলে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনা যাবে না। এফবিসিসিআই ‘হোঁচট খাওয়া’ ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়ার যে প্রস্তাব করেছে, নীতিগতভাবে তার সঙ্গে দ্বিমত না থাকলেও শঙ্কা থেকে যায় যে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরাও এর অপব্যবহার করেন কি না। 

ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরেই ব্যাংকের সুদের হার কমানোর দাবি এসেছে। সরকারও নীতিগতভাবে এ বিষয়ে একমত হয়েছে। কিন্তু তারা কোনোভাবে ব্যাংকমালিকদের সুদের হার কমাতে বাধ্য করতে পারেনি। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকমালিকেরা সরকারের কাছ থেকে একের পর এক সুবিধা আদায় করছেন। এর আগে ব্যাংকমালিকদের দাবি মেনে নিয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইনটি সংশোধন করা হয়েছে, যার ফলে একই পরিবারের চারজন সদস্য এবং একনাগাড়ে ৯ বছর ব্যাংকের পরিচালক থাকতে পারবেন। বাজেটে তাঁদের জন্য করপোরেট করের হার ২.৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ আছে বলে মনে হয় না। বরং মানুষের মধ্যে এ কথাই বলাবলি হচ্ছে যে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ব্যাংকের মালিকদের এই সুযোগ দিতে যাচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এতে ঋণগ্রহীতা ও গ্রাহকেরা লাভবান হবেন না। কেননা, এখনো ব্যাংক গ্রাহকদের যে হারে সুদ দেয়, ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে তার চেয়ে অনেক বেশি সুদ নিয়ে থাকে।

ব্যাংক সুদের হার কমানোর বিষয়ে এখনো ব্যাংকমালিকদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পাওয়া সত্ত্বেও তাঁদের এই সুবিধা দেওয়া হবে আত্মঘাতী। ব্যাংকমালিকেরা সুদের হার না কমালে কর-সুবিধা তুলে নেওয়া হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মৃদু কণ্ঠে যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে, তা প্রভাবশালী ব্যাংকারদের মন গলাতে পারবে বলে মনে হয় না। তাঁরা আগের অবস্থানেই অনড় থাকবেন। অর্থাৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে কম সুদে আমানত নিয়ে বেশি সুদে ঋণগ্রহীতাদের ঋণ দেবেন।

এমনিতেই ব্যাংক খাত নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত। সরকারি ব্যাংককে রক্ষা করতে সরকার ফি বছর জনগণের করের টাকা ঢালছে। আর বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের অন্যায্য সুবিধা দিয়ে চলেছে। অথচ যে বিনিয়োগের ওপর ভিত্তি করে ব্যাংক ব্যবসা পরিচালিত হয়, সেই বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে সরকারের নজর কম। ফলে বেসরকারি ব্যাংকমালিকেরা লাভবান হলেও দেশের অর্থনীতিতে তা ইতিবাচক কোনো ভূমিকা পালন করবে না।