Thank you for trying Sticky AMP!!

বাজেট ২০১৯-২০

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে যে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন, তার পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে বাজেটের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতো করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলেছে, বাজেটে ধনীদের জন্য অনেক কিছু থাকলেও কৃষক ও সাধারণ মানুষের জন্য কিছু নেই।

বর্তমান অর্থমন্ত্রীর এটি প্রথম বাজেট হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের ১১তম বাজেট। ফলে এই বাজেটে সরকারের অর্থনৈতিক নীতি-কৌশলের ধারাবাহিকতা এবং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন থাকাটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে এই বাজেটে নতুনত্ব কিছু নেই। যদিও প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী জোরেশোরে নতুনত্বের আওয়াজ তুলেছিলেন।

‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত এই বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। আর আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১ লাখ ৪১ হাজার ২১২ কোটি টাকা ঘাটতি নিয়ে আগামী অর্থবছরটি শুরু হবে। বহু বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অর্থমন্ত্রী বছরের শুরুতে বিরাট অঙ্কের বাজেট ঘোষণা করেন আর বছরের শেষে গিয়ে সেটি বাস্তবায়ন করতে না পেরে কাটছাঁট করতে থাকেন। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা এসব বাজেটকে অবাস্তব ও অতিমাত্রায় উচ্চাভিলাষী বলে অভিহিত করে থাকেন। নতুন অর্থমন্ত্রীও উচ্চাভিলাষ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি বলে আমাদের ধারণা।

বাজেটের আগে ব্যাংকিং খাত নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকারও করেছেন। কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেননি। খেলাপি ঋণ সংস্কৃতির অবসানে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা বললেও কীভাবে সেটি করবেন, তারও পথনকশা তাঁর বাজেট বক্তৃতায় পাওয়া গেল না। নতুন অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ এবং সেটি অর্জন করতে বেসরকারি বিনিয়োগের হার বাড়ানো প্রয়োজন। দুঃখের বিষয়, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়তে পারে এমন কোনো সুসংবাদ অর্থমন্ত্রী আমাদের দিতে পারেননি। যদিও প্রতিবছরের মতো এবারের বাজেটেও কালোটাকা সাদা করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তবে অর্থমন্ত্রীর বাজেটের ইতিবাচক দিক হলো তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকার তহবিল জোগান ও প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা। এতে সীমিত আকারে হলেও বেকার তরুণেরা দিশা খুঁজে পাবেন আর হুন্ডির দৌরাত্ম্য কিছুটা কমবে। এ ছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য ভ্যাটমুক্ত রাখা, সামাজিক নিরাপত্তাবলয় বাড়ানো এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করি।

এবারের বাজেটে উদ্বেগের বিষয় হলো, যে কৃষকেরা দিনরাত পরিশ্রম করে আমাদের খাবার জোগান, তাঁদের জন্য কোনো সহায়তা না বাড়ানো। শস্যবিমার মাধ্যমে দুর্যোগ-দুর্বিপাকেই তাঁদের সহায়তার কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ, দুর্যোগ না এলে কৃষক সহায়তা পাবেন না? জীবনযাত্রার ব্যয় হিসাব করলে করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়ানোরও যুক্তি আছে বলে মনে করি না। ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলে স্মার্টফোনের ওপর ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বাড়ানো কিংবা ল্যাপটপের কর রেয়াত না দেওয়া কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বাস্তবসম্মত নয় প্রত্যেক বিদ্যুৎ গ্রাহকের জন্য টিআইএন নম্বর বাধ্যতামূলক করাও।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় যে সমৃদ্ধির সোপান রচনা করতে চেয়েছেন, তাতে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোরও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি তখনই অর্থবহ হবে, যখন এর সুফল বৃহত্তর জনগণ পাবে। সর্বোপরি পূর্বসূরিদের মতো বাজেটের ঘাটতি পূরণ এবং দুর্নীতি ও অপচয় কমিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নই নতুন অর্থমন্ত্রীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। দেখার বিষয় তিনি সেটি কীভাবে মোকাবিলা করেন।