Thank you for trying Sticky AMP!!

বাল্যবিবাহ ও স্থানীয় প্রশাসন

করোনাকালে গত দুই মাসে গ্রামগঞ্জে যেসব অনাচার হয়েছে, তার মধ্যে বাল্যবিবাহ উল্লেখযোগ্য। এসব বাল্যবিবাহের বেশির ভাগ হয়ে থাকে স্কুলপড়ুয়া নাবালক ছেলেমেয়ের মধ্যে। করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকার সুযোগটি নিয়েছেন একশ্রেণির অভিভাবক। আশার কথা, এ সময়ে 

স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে বেশ কিছু বাল্যবিবাহ বন্ধ করার খবরও গণমাধ্যমে এসেছে।

 গত শুক্রবার কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন তার মা–বাবা। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান ঘটনাস্থলে যান। তিনি কনের বাবাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং মেয়েকে ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেবেন না, এই মর্মে অঙ্গীকারনামা লিখিয়ে নেন। পরে ম্যাজিস্ট্রেট বরের বাড়ি গিয়ে বরকে না পেলেও অন্যদের এর কুফল সম্পর্কে বোঝান। তাঁরাও অঙ্গীকার করেন, বাল্যবিবাহ করাবেন না।

 প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, কেবল কিশোরগঞ্জে নয়, করোনাকালে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, সিরাজগঞ্জ সদর ও রায়গঞ্জ উপজেলা, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও ঢাকার দোহারে বাল্যবিবাহের আয়োজন বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় এক মেধাবী স্কুলছাত্রীর মা ও ভগ্নিপতি তার বিয়ের উদ্যোগ নিলে মেয়েটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানিয়ে দেয়। এরপর প্রধান শিক্ষক প্রশাসনকে জানালে তাদের হস্তক্ষেপে বিয়েটি বন্ধ হয়। সাহসী ভূমিকার জন্য আমরা মেয়েটিকে অভিনন্দন জানাই। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকতে বলব পরিবার থেকে যেন মেয়েটির ওপর কোনো চাপ না দেওয়া হয় এবং তার পড়াশোনা বন্ধ না হয়।

অনেক স্থানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বাল্যবিবাহ বন্ধে সহায়তা করেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই অনাচারের সঙ্গে তাঁদের যুক্ত থাকতেও দেখা গেছে। লক্ষ্মীপুরে নবম শ্রেণির ছেলে ও মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতেই। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিয়েটি বন্ধ হয়। ম্যাজিস্ট্রেট কনের বাবা ও চাচাকে ১০ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ রকম অসচেতন অভিভাবকদের আইনানুগ শাস্তিই প্রাপ্য। তাঁরা অভিভাবক হতে পারেন। কিন্তু বাল্যবিবাহ দিয়ে ছেলেমেয়ের জীবন ধ্বংস করতে পারেন না।

বাল্যবিবাহ বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের এসব উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। একই সঙ্গে অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি। জনপ্রতিনিধিরা সহায়তা না করলে প্রশাসনের পক্ষে জানা সম্ভব নয়, কোথায় কোথায় বাল্যবিবাহের আয়োজন করা হচ্ছে।