Thank you for trying Sticky AMP!!

বাল্যবিবাহ বন্ধে রেকর্ড

সম্পাদকীয়

নাটোরের গুরুদাসপুরে পাঁচ মাসে ৮১টি বাল্যবিবাহ বন্ধ হওয়ার খবরটি নিশ্চয়ই আনন্দের। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক প্রমুখের সহযোগিতায় এসব বিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। কোনো কোনো বাল্যবিবাহ বন্ধে মেয়েরা নিজেরাই সাহসী ভূমিকা রেখেছে। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গুরুদাসপুরের ধানুড়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিউটি খাতুনকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তার অভিভাবকেরা। মেয়েটি বিলবোর্ডে দেওয়া টেলিফোন নম্বর থেকে ইউএনওকে ফোন করে বিষয়টি জানালে তিনি বিয়ে বন্ধ করে দেন। এ সাহসী ভূমিকার জন্য ইউএনও প্রশাসন তাকে পুরস্কৃত করে।

উপজেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, বাল্যবিবাহ বন্ধে গত জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালত করা হয়েছে। এসব ঘটনায় গত তিন মাসে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন, ১৭টি মামলা হয়েছে। গত পাঁচ মাসে গুরুদাসপুর পৌরসভা এলাকায় ১৮টি, নাজিরপুর ইউনিয়নে ১৩টি, মশিন্দায় ১০টি, ধারাবারিশায় ১১টি, চাপিলাতে ১০টি, বিয়াঘাটে ১৩টি ও খুবজীপুরে ৬টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়েছে।

এসব বাল্যবিবাহ বন্ধের তথ্য উৎসাহব্যঞ্জক। তবে মনে করার কারণ নেই যে গুরুদাসপুরে সব বাল্যবিবাহ বন্ধ করা গেছে। যেসব বাল্যবিবাহের ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে, কেবল সেগুলোই বন্ধ হয়। এর বাইরে অনেক বাল্যবিবাহ হয় অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে। বাল্যবিবাহ বন্ধে শিক্ষকেরা বেশি কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেন। বিদ্যালয়ের মেয়েশিক্ষার্থীদের প্রতি নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা যায়। কোনো মেয়ে বিদ্যালয়ে না এলে তাঁরা অভিভাবকের কাছে খোঁজ নিতে পারেন। এর পাশাপাশি বাল্যবিবাহের বিপদ সম্পর্কে অভিভাবকদের বোঝাতে হবে। বাল্যবিবাহ কেবল একটি মেয়ের জীবন ধ্বংস করে না, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও ঠেলে দেয় গভীর অনিশ্চয়তায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের গর্ভে যে সন্তান জন্ম নেবে, সে–ও অপুষ্টিতে ভুগবে।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বলছে, বাংলাদেশে ৩ কোটি ৮০ লাখ নারী শিশুকালেই বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছেন। সংস্থার গত ৭ অক্টোবর ‘শিশু বিয়ে সমাপ্তি: বাংলাদেশের অগ্রগতি চিত্র’ প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের যে ১০টি দেশে বাল্যবিবাহের হার বেশি, তার মধ্যে বাংলাদেশও আছে। ২৪-২৫ বছর বয়সী নারীদের ৫১ শতাংশ বিয়ে হয়েছে ১৮তম জন্মদিনের আগেই। ১৯৭০ সালের তুলনায় দেশে বাল্যবিবাহ ৯০ শতাংশ কমলেও এখনো বিপজ্জনক অবস্থায় আছে। এ হার শূন্যে নিয়ে আসতে হবে।

গুরুদাসপুরের বাল্যবিবাহ বন্ধে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু প্রশাসন একা বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে পারবে না, যদি অভিভাবক তথা স্থানীয় জনগণ সহযোগিতা না করে। গুরুদাসপুরের দৃষ্টান্ত দেশের অন্যত্রও অনুসৃত হোক।