Thank you for trying Sticky AMP!!

বাস থেকে ফেলে যাত্রীকে হত্যা

বাসভাড়া নিয়ে পরিবহনকর্মীদের সঙ্গে যাত্রীদের বিরোধ, কথা-কাটাকাটি হরহামেশাই ঘটে থাকে। এর অন্যতম কারণ ভাড়া নির্ধারিত না থাকা কিংবা থাকলেও সেটি না মানা। তাই বলে ভাড়া-বিরোধকে কেন্দ্র করে যাত্রীকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে হত্যা করার ঘটনা প্রমাণ করে এ খাতে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। পরিবহনকর্মীরা নিজেদের আইনকানুনের ঊর্ধ্বে ভাবেন।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, গত শুক্রবার রাতে জসিমউদ্দিন নামের এক যাত্রী সিটি পরিবহনের একটি বাসে (চট্ট মেট্রো–জ-১১-২০৩১) নগরের আগ্রাবাদ থেকে বহদ্দারহাটে যাচ্ছিলেন। চালকের সহকারী তাঁর কাছে আট টাকা দাবি করলে তিনি বলেন, এত কম দূরত্বে আট টাকা ভাড়া হতে পারে না। তিনি সহকারীর হাতে ১২ টাকা দিয়ে পাঁচ টাকা ফেরত চান। কিন্তু সহকারী তাঁকে ফেরত দেন চার টাকা। এ নিয়ে যাত্রী ও সহকারীর মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে বাসের চালকও যোগ দেন এবং তাঁরা দুজন মিলে লাথি মেরে ওই যাত্রীকে রাস্তায় ফেলে দেন। এতে তিনি মাথায় গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি মারা যান।

কোনো সভ্য দেশে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে, ভাবতেও অবাক লাগে। ঘরে-বাইরে কোথাও মানুষের নিরাপত্তা নেই। যে যাত্রী রাতে বাসে উঠেছিলেন গন্তব্যে পৌঁছাতে, তিনি কি জানতেন তাঁকে লাশ হয়ে যেতে হবে? সিলেটে যে দম্পতি গাড়ি নিয়ে সন্ধ্যায় বেড়াতে বের হয়েছিলেন, তাঁরাও জানতেন না মানবরূপী পশুরা তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। সাভারে যে স্কুলছাত্রী ভাইয়ের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল, সে–ও কি ভাবতে পেরেছে তাকে দুর্বৃত্তের ছুরিতে জীবন দিতে হবে?

করোনা মহামারির কালে যেখানে মানুষের মানবিকতাবোধ জাগ্রত হওয়ার কথা, একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসার কথা, সেখানে পথেঘাটে বেঘোরে মানুষ হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অসহায় ও দুর্বলের ওপর সর্বশক্তি দিয়ে সবল ঝাঁপিয়ে পড়ছে।

বাস থেকে ফেলে যাত্রী হত্যার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগরের প্রবেশমুখ সিটি গেটের পাশে গ্লাক্সো কার্যালয়ের সামনে রেজাউল করিম নামের এক যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনার তিন মাস আগে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া এলাকায় সাইদুল রহমান নামের এক যুবককে বাস থেকে নদীতে ফেলে হত্যা করেছিলেন পরিবহনকর্মীরা। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএর শিক্ষার্থী ছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এর কোনোটিরই বিচার হয়নি। আসামিরা ধরা পড়লেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেছেন।

পরিবহন খাতে বহু বছর ধরেই নৈরাজ্য চলছে। যাত্রী সাধারণ বাসমালিক ও শ্রমিকদের কাছে জিম্মি। বেপরোয়া ও নৈরাজ্যকর যান চলাচলের কারণে মানুষ মরছে। এখন পরিবহনশ্রমিকেরা যদি বাস থেকে ফেলে যাত্রীদের হত্যা করেন, তখন সাধারণ মানুষ নিজেদের নিরাপদ মনে করবে কীভাবে?

বাসভাড়া নিয়ে যাত্রী ও পরিবহনকর্মীদের বিরোধ এড়াতে কর্তৃপক্ষ সব শ্রেণির বাসে আগাম টিকিটের ব্যবস্থা করতে পারে। ঢাকা চাকাসহ বিভিন্ন কোম্পানির বাসে এটি সফল হলে অন্য পরিবহনে বাস্তবায়ন করা যাবে না কেন?

চট্টগ্রামের ঘটনায় বাসচালক ও তাঁর সহকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যাত্রীকে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। আশা করি, অতীতের মতো এবারও বিচারের বাণী নীরবে–নিভৃতে কাঁদবে না। পরিবহন খাতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ হোক। নিশ্চিত হোক যাত্রীসাধারণের নিরাপত্তা।