Thank you for trying Sticky AMP!!

বায়ুদূষণের বাড়াবাড়ি

রাজধানী ঢাকার বাতাসে বুকভরে শ্বাস নেওয়া যায় না। কারণ, এ বাতাসে দূষণের মাত্রা খুব বেশি। পৃথিবীর যেসব শহর বায়ুদূষণে ধুঁকছে, সেগুলোর তালিকার একদম শীর্ষের কাছাকাছি জায়গা হয় আমাদের ঢাকার। ভারতের দিল্লি সবার ওপরে, ঢাকা ঠিক তার পরেই। কখনো ঢাকা দিল্লিকেও ছাড়িয়ে যায়। ‘দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০১৯’ শীর্ষক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের যে পাঁচ দেশের শতভাগ মানুষ দূষিত বায়ুর মধ্যে বসবাস করে, বাংলাদেশ সেগুলোর অন্যতম। আর বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পঞ্চম। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা গেছে।

সারা বছরই ঢাকার বাতাসের মান কমবেশি খারাপ থাকে। কারণ, অতিরিক্ত মোটরযান চলাচল করে আর নানা রকমের নির্মাণকাজ চলে অবিরাম। তবে শুকনো মৌসুমে ঢাকার বাতাস বিপজ্জনক মাত্রায় দূষিত হয়ে পড়ে। হেমন্তে প্রকৃতি যখন শীতল হয়ে আসে, আকাশ স্বচ্ছ হয়ে ওঠে, রাতে শিশির ঝরে, তখন বাতাসেরও নির্মল হয়ে ওঠার কথা। কিন্তু ঢাকায় ঘটে ঠিক তার উল্টো। এ সময় থেকেই এ শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে শহরের বাতাসে ভাসমান ভারী বস্তুকণা পিএম ২ দশমিক ৫ ও পিএম ১০-এর পরিমাণ বেড়ে যায়।

ঢাকার বায়ুদূষণের স্থায়ী কারণগুলোর অন্যতম হলো মাত্রাতিরিক্ত মোটরযানের চলাচল। এ শহরে প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ মোটরযান চলাচল করে। সেগুলোর একটা বড় অংশের ফিটনেস থাকে না। ফিটনেসহীন মোটরযানগুলো থেকে কালো ধোঁয়াসহ নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থ বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। এ শহরের চারপাশে রয়েছে প্রচুর ইটভাটা। সেগুলোতে নিম্নমানের কয়লা, প্লাস্টিক ইত্যাদি পোড়ানো হয়। ফলে বাতাস বিষাক্ত হয়ে পড়ে। তা ছাড়া ঢাকা শহরের ভেতরে ও চারপাশে অজস্র কলকারখানা থেকে দিনরাত দূষণকারী উপাদান বায়ুমণ্ডলে ছড়ায়। এ শহরের আরও একটা বড় সমস্যা হলো এখানে সারা বছরই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িসহ নানা ধরনের নির্মাণকাজ চলে। তার ফলে প্রচুর ধুলা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।

বাতাসে মিশ্রিত সালফার, সিসা, দস্তা ইত্যাদি ধাতুকণা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর; বিশেষত শিশুদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রাকৃতিক পরিবেশদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে বছরে যত মানুষের মৃত্যু ঘটে, তার দুই–তৃতীয়াংশই বায়ুদূষণের ফলে। বায়ুদূষণের কারণে হৃদ্‌রোগ, শ্বাসকষ্টজনিত জটিল সমস্যা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও ক্যানসার হয়। বিশেষত শিশু ও গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব প্রকট।

ঢাকার বায়ুদূষণের সমস্যাটি স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে। শুকনো মৌসুমে যখন সমস্যাটি অত্যন্ত প্রকট হয়ে ওঠে, তখন এ বিষয়ে নানা কথা হয়। সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন, আলোচনা–পর্যালোচনা হয়। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো মানববন্ধন, সভা, সেমিনার ইত্যাদির আয়োজন করে। কিন্তু সমস্যাটি সমাধানের উদ্দেশ্যে কার্যকর কোনো উদ্যোগ সাধারণত নেওয়া হয় না। 

ঢাকা মহানগরে অনেকগুলো সংস্থা নানা ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত। বায়ুদূষণের কারণগুলো দূর করার বিষয়ে তাদের কোনো ভাবনা আছে কি না, তা জানা যায় না। যেমন কালো ধোঁয়াসহ ক্ষতিকর বস্তুকণা বাতাসে ছড়ানোর জন্য দায়ী ফিটনেসহীন মোটরযানগুলোর চলাচল বন্ধ করার দায়িত্ব বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার। ঢাকার চারপাশের ইটভাটাগুলোর পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের, রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি ও অন্যান্য নির্মাণকাজের সময় ধুলা ওড়ানো বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাধ্য করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এসব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা হলে বায়ুদূষণের মাত্রা অবশ্যই কমানো সম্ভব। সে জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের দায়িত্ববোধ অপরিহার্য। কিন্তু কেউ কি কোনো দায়িত্ব বোধ করেন?