Thank you for trying Sticky AMP!!

বিচারকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোসাম্মাত কামরুন্নাহারের বিষয়ে বিচার বিভাগ যে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে বিচারালয়ের প্রতি গণমানুষের আস্থা বাড়াবে। ব্যক্তি বিচারক ভুল করতে পারেন; কিন্তু সামগ্রিকভাবে বিচার বিভাগ ভুল করতে পারে না।

ধর্ষণকে সব দেশেই গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণী ধর্ষণ মামলার রায় দিতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোসাম্মাত কামরুন্নাহার যেসব মন্তব্য করেছেন ও নির্দেশনা দিয়েছেন, তা বিভিন্ন মহলে অনভিপ্রেত ও আইনবহির্ভূত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। উপস্থাপিত সাক্ষ্য ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আদালত অপরাধের বিচার করে থাকেন। কিন্তু বিচারক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এ নির্দেশনা দিতে পারেন না যে ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণের মামলা নেওয়া যাবে না। ফৌজদারি অপরাধ কখনো তামাদি হয়ে যায় না। বিচারকের আসনে বসে কারও এ মন্তব্য করাও সমীচীন নয় যে কে কখন হোটেলে যাবেন কি যাবেন না। এসব প্রশ্ন ও মন্তব্য ভুক্তভোগী নারীর প্রতি যেমন অবমাননাকর, তেমনি আদালতের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরিতেও ভূমিকা রাখতে পারে; যা কখনো কাম্য নয়।

বিচারকের উল্লিখিত মন্তব্য ও নির্দেশনা সমাজে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার ও নারী সংগঠনগুলো প্রতিবাদ করেছে। স্বয়ং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিচারকের মন্তব্যকে আইন ও সংবিধান পরিপন্থী বলে উল্লেখ করার পাশাপাশি তাঁর বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লেখার কথা বলেছেন। এর ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ওই বিচারককে বিচারিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। আমরা প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীর এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। এ ঘটনায় প্রমাণিত হলো ব্যক্তি বিচারক ভুল করলে তা শোধরানো অসম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে সাক্ষ্য আইনের দুটি ধারা বাতিল করতে অতি সম্প্রতি হাইকোর্টে রিট হয়েছে। রিট করেছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও নারীপক্ষ। সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে বলাৎকার বা শ্লীলতাহানির অভিযোগ এলে সাধারণভাবে নারীকে দুশ্চরিত্র হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ থেকে যায়। ওই আইনের ১৪৬(৩) ধারা অনুযায়ী, চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ ও সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলা যায়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারকের মন্তব্য আমাদের আইনের ওই দুটি ধারার কথা মনে করিয়ে দেয়।

এ প্রেক্ষাপটে প্রত্যাশা থাকবে, উচ্চ আদালত বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেবেন। অন্যান্য ক্ষেত্রেও নিম্ন আদালতে কোনো ব্যত্যয় হলে উচ্চ আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারেন। সম্প্রতি অভিনেত্রী পরীমনিকে একাধিকার রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনায় নিম্ন আদালতকে উচ্চ আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য করার সুযোগ নেই। অতএব, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে এমন বিচারককে পদায়ন করা উচিত, যাঁরা এসব অপরাধ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন। নারী বিচারক হলেই যে তিনি শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আইন ভালো বুঝবেন, তার নিশ্চয়তা নেই।