Thank you for trying Sticky AMP!!

বুয়েটের সময়োচিত সিদ্ধান্ত

গত শুক্রবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য সাইফুল ইসলামের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি সময়ের দাবি ছিল। বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উপাচার্যের কাছে যে ১০ দফা দাবি পেশ করা হয়েছিল, তাতে অন্য দাবিগুলোর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংগঠনিক রাজনীতি বন্ধ, আবরার হত্যার দ্রুত বিচার, হত্যাকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও আবরারের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল। বৈঠকে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিলেও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ আছে। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে। তবে ভর্তি পরীক্ষার জন্য দুই দিনের জন্য কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে।

 প্রথম আলোকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনজন শিক্ষাবিদ যথাক্রমে জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক আইনুন নিশাত ও সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্ররাজনীতি ভালো কিছু দিচ্ছে না। নৃশংসতা, বর্বরতা, হানাহানি চলছে। অসুস্থ ছাত্ররাজনীতি শিক্ষাঙ্গনকে গ্রাস করে ফেলেছে। ছাত্ররাজনীতির নামে ভিন্নমতের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে তিন শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরাজনীতি বন্ধ করার কথাও বলেছেন। ছাত্ররাজনীতির নামে সরকারি ছাত্রসংগঠনের অপতৎপরতা যেমন শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করেছে, তেমনি শিক্ষকরাজনীতিও শিক্ষার পরিবেশকে দূষিত করছে। প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরাজনীতির নামে দলীয় আনুগত্য প্রকাশের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। একশ্রেণির শিক্ষক স্বার্থ হাসিলের জন্য সরকারি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যবহার করছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞান সৃষ্টির আধার না হয়ে অসুস্থ ছাত্র ও শিক্ষকরাজনীতি চর্চার ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

কোনো কোনো মহল বুয়েটের সিদ্ধান্তকে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া বলে যে সমালোচনা করছে, তা সঠিক নয়। এটি মোটেই বিরাজনীতিকরণ নয়, বরং ছাত্ররাজনীতির নামে উচ্চ শিক্ষালয়ে যে অনাচার ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চলছে, সেটাই বিরাজনীতিকরণ। সম্প্রতি গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সফল আন্দোলন করেছেন, যাতে কোনো সাংগঠনিক শক্তির প্রয়োজন দেখা দেয়নি। এ রকম ব্যক্তিকেই–বা কেন উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে? ক্যাম্পাসে সুস্থ ছাত্ররাজনীতি চর্চার পূর্বশর্ত হলো নিয়মিত ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গত আড়াই দশকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হয়নি। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হলেও সেটি গ্রহণযোগ্য হয়নি।

বুয়েটের সিদ্ধান্তের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বিষয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এক সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটের ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, সে বিষয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে বলে মন্তব্য করেছিলেন।

নব্বইয়ের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে সন্ত্রাসকবলিত ছাত্ররাজনীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ সাময়িকভাবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে সময়ে তাঁর আহ্বানে কোনো দল সাড়া দেয়নি। ছাত্ররাজনীতির নামে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের ছাত্রসংগঠন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, অনেক নেতা-কর্মী চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সিট–বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। হলে হলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নির্যাতন কেন্দ্র বা টর্চার সেল। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ যখন কথিত ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে আমাদের সজাগ করে দিয়েছিলেন, তখন তাঁর কথা শুনলে হয়তো আবরার ফাহাদসহ অনেক তরুণকে অকালে প্রাণ দিতে হতো না। বুয়েটের সিদ্ধান্ত উচ্চশিক্ষালয়ে সব ধরনের অপতৎপরতার অবসান ঘটাবে আশা করি।